বিতর্কিত সেই ওসি বরখাস্ত : এসআইদের শাস্তির সুপারিশ
বহু বিতর্কিত ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে অবশেষে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসাথে তার দুই সহযোগী এসআই সুজন বিশ্বাস ও এসআই একরামুল হকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে।
রোববার রাতে পুলিশ সদর দফতরের এক আদেশে ওসি প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ এসেছে বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নুরুল আবসারকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি সময়ে সিআইপি মর্যদার একজন শিল্পপতিকে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ সদর দফতরের সুপারিশে সিএমপি কমিশনার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
বিষয়টি স্বীকার করে সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (অর্থ, প্রশাসন ও ট্রাফিক) একেএম শহিদুর রহমান বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রদীপকে বরখাস্ত ও অপর দুইজনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তির সুপারিশ আশার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুপার রিফাইনারির পণ্য আটক নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৪ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় সুপার রিফাইনারি নামক একটি কারখানা থেকে ৯ হাজার লিটার কেরোসিন সলভেন্ট অয়েল নিয়ে একটি ট্যাংক লরি অন্য একটি কারখানায় যাওয়ার সময় বায়েজিদ থানা পুলিশের এসআই সুজন বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ লরিটি আটক করে। লরিতে অবৈধ তেল রয়েছে এমন অভিযোগে আটকের পর সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে তেল পরিবহন এবং বৈধভাবে আমদানি করার যাবতীয় কাগজপত্র প্রদর্শন করে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা কোনো কথা না শুনেই লরির চালক, হেলপার এবং কারখানার এক সুপারভাইজারসহ লরিটি আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পরে এ ঘটনায় সুপার রিফাইনারি কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্য কর্মকর্তাসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে এসআই সুজন বিশ্বাস বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করেন একই থানার এসআই একরামুল হক।
এ ঘটনার পর সুপার রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আহমেদ পুলিশের আইজি বরাবর তাদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। আইজি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি তদন্ত শেষে সিএমপি কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডলসহ সাত কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তারা হলেন, সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামি থানার হয়রানিমূলক মামলার বাদী এসআই সুজন বিশ্বাস, একই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই একরামুল হক, মামলা রেকর্ডকারী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, নগর পুলিশের উত্তর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি-পাঁচলাইশ) দীপক জ্যোতি খীসা, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-উত্তর) শেখ শরিফুল ইসলাম, উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) পরিতোষ ঘোষ এবং সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল।
এ ঘটনা ছাড়াও ওসি প্রদীপ দাশ সিএমপির পাচঁলাইশ থানায় কর্মরত থাকাবস্থায় হরতাল চলাকালে বিনা উস্কানিতে পথচারীদের উপর হামলা এবং মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের ধরে নিজর পিস্তল দিয়ে গুলি করার ঘটনা সে সময় বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। এসব ঘটনায় সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কে আন্তর্জাতিক আদালতে করা মামলায় ওসি প্রদীপ দাশকেও আসামি করা হয়েছিল।
জীবন মুছা/এসএইচএস/আরআইপি