ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে আ.লীগের প্রার্থী নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, বিএনপির চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

পৌরসভা নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। এ কারণে ব্যস্ত সময় পার করছে ঠাকুরগাঁওয়ে তিন পৌরসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষণার আগেই নানামুখী প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন সব প্রার্থী। সেই সঙ্গে কাউন্সিলর প্রার্থীরা পৌর নাগরিকদের মন জয়ে তৎপর।

আওয়ামী লীগ, বিএনপির একাধিক নেতার পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বসে নেই। নিমন্ত্রণ-দাওয়াত বাদ দিচ্ছেন না কেউ। প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে ভিড় করেন প্রার্থীরা। পাশাপাশি সমর্থকদের দিয়ে ডিজিটাল পোস্টার ও ব্যানার টানানো হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ-গ্রুপ খুলে কৌশলী প্রচারণায় নেমেছেন প্রায় সবাই। শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে অনেকে তাদের প্রার্থিতা হওয়ার বিষয়টি সাধারণ ভোটারের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন।

অনেকেই ব্যানার ও বিলবোর্ড টানিয়ে পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দোয়া কামনা করছেন। এদিকে দেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয় নির্বাচন দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে আয়োজনের আইন পাস হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। অনেক প্রার্থী এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়েছেন। আবার অনেক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় নিজ নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে লবিং শুরু করেছেন।

শীর্ষ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এবার দলীয় প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন হওয়াই বিদ্রোহী হওয়ার সুযোগ না থাকায় সব দলের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। নেতাদের মতে, এবার তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারের মন জয় করতে মাঠে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

এবার ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নির্বাচনী মাঠে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ৪ জন মনোয়ন পাওয়ার জন্য লবিং শুরু করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় প্রাথমিকভাবে তার ছোট ভাই মির্জা ফয়সাল আমিনের সম্ভাব্য প্রার্থিতা ঘোষণার কথা শোনা যাচ্ছে।

অপরদিকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার চৌধুরী রঞ্জু গোপনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সরকারি সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও বিএনপি নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এর বিরোধিতা করছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে শুরুতেই দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। বৃদ্ধি পাবে মনোনয়ন বাণিজ্য।

তারপরও বসে নেই উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ দলের শীর্ষ পর্যায়ে লবিং শুরু করেছেন। এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকেশ। দল থেকে কাকে সমর্থন দেয়া হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএমএ মঈন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বাবু, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ আপেল, বর্তমান প্যানেল মেয়র বাবলুর রহমান বাবলু ও বিএনপির সহ-সভাপতি মির্জা ফয়সাল আমিন, গোলাম সারোয়ার চৌধুরী রঞ্জু কৌশলে নির্বাচনী মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে পৌরসভার জনসাধারণের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও পৌর এলাকার পাড়া-মহল্লায় সভা ও উঠান বৈঠক করে বেড়াচ্ছেন। বাজারের চায়ের দোকানগুলোতে এখনই গভীর রাত পর্যন্ত কে প্রার্থী হচ্ছেন, কে প্রার্থী হলে ভালো হবে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করছেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয় চারজন প্রার্থীর কারণে দলের মধ্যে গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হবে।

পৌর এলাকার বাসিন্দা আহম্মেদ হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের মধ্যে বর্তমান মেয়র এসএমএ মঈনের রিজার্ভ ভোট ছাড়া অন্য প্রার্থীদের নেই। তাই বর্তমান মেয়রকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে আওয়ামী লীগ।

পৌর শহরের টিকাপাড়া এলাকার শাহাজাহান হোসেন জানান, আওয়ামী লীগের ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে জনমতে এগিয়ে আছে তরুণ নেতা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল মজিদ আপেল। কারণ জেলা আওয়ামী লীগের নানা গ্রুপিংয়ের মাঝে শহরের অসহায় মানুষ তার কাছে যায় যেকোনো সমস্যা সমাধানে। এবং তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করেন ওইসব মানুষকে সেবা করতে। সেদিক থেকে আপেলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাকে পৌর মেয়র নির্বাচিত করলে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা একজন্য যোগ্য মেয়র পাবে।

সিরাজুল ইসলাম নামে হাজিপাড়া মহল্লার এক বাসিন্দা জানান, ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় নির্বাচনের আমেজ ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি থেকে একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে ৪ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির সহ-সভাপতি মির্জা ফয়সাল আমিনের জন্য যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ আপেলের লড়াই হবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ সাদেক কূরাইশী জানান, দলের জন্য ত্যাগী নেতাকেই আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে তৃণমূল নেতা কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীকেই দলীয় সমর্থন দেওয়া হবে।  

এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান জানান, যেহেতু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্বাচনী এলাকা। তাই দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে আমরা আশাবাদি ঠাকুরগাঁও পৌর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করবেন।
 

ব্যস্ত সময় পার করছে পীরগঞ্জের প্রার্থীরা
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জে ব্যস্ততা বেড়েছে প্রার্থীদের। বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বৈঠক, সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত মেলানোসহ আগ বাড়িয়ে মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে গণসংযোগের পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন সাধারণ মানুষের পারিবারিক অনুষ্ঠানেও।

এ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক মেয়র কশিরুল আলম এবং জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও গরীবের বন্ধু বলে পরিচিত গোলাম হোসেন, বিএনপি থেকে রাজিউর রহমান রাজুকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পীরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির অবস্থান সুদৃঢ়। এ কারণে অন্যান্য দলের প্রার্থীদের এখানে সেভাবে দেখা হয় না। মূলত এই তিন দলের প্রার্থীই ভোটের মাঠে মুল ফেক্টর। ভোটাররা বলছেন, মেয়র পদে প্রধান এই তিনপ্রার্থীর মধ্যে দুই জন চেয়ারে ছিলেন এবং একজন এখন আছেন। কাজেই তাদের সম্পর্কে ভোটারদের আর নতুন করে জানতে হবে না। তাদের ব্যাপারে ভোটাররা মোটামুটি অবগত আছেন।

বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত জাতীয় সংসদ, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে এই পৌরসভা এলাকায় জাপার প্রধান্যই বেশী। কারণ তাদের ভোটার-সমর্থক বেশী। যদিও বর্তমানে তাদের সেই অবস্থান নেই। তারপরও চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এখানে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান ভালো হলেও মামলা হামলার ভয়ে তারা অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন।

আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় তারা রয়েছেন বেশ ফুরফুরা মেজাজে। মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী নিয়ে কথা না উঠলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। প্রকাশ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধাচারণ করছেন। এতে কিছুটা হলেও সংকটে রয়েছে দলটি। তাছাড়া সরকারি দল হিসেবে এমনিতেই তাদের কিছু নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতার দাপট, থানায় তদবিরবাজি, খাদ্যগুদামে অাধিপত্য বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ।

এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা এক হতে না পারলে ভোটের ফলাফল কি হতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন নীতি নির্ধারকরা। যদিও নেতারা বলছেন, ভোটের আগে সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাণীশংকৈলে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা একাধিক প্রার্থীর
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা নিজেদের পৌর মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত সর্মথকদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক জোরেসোরে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত না করায় মাঠে থাকা প্রার্থীদের শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো মুশকিল হয়ে পড়বে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বেশি। পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৭ জন, বিএনপির ২ জন, জাতীয় পার্টির একজন  ও সতন্ত্র দুইজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।

পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ জন হলেন, মামুনুর রশিদ এ্যালবার্ট, ইসতেখারুল আলম, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা, প্রসান্ত বসাক, রফিউল ইসলাম, সাধন বসাক ও জাহাঙ্গির আলম সরকার।

বিএনপির দুইজন হলেন, মঞ্জুরুল আলম ও মাহামুদুন নবী পান্না।  জাতীয় পার্টির একজন শামসুল আরেফিন ও সতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন, মোকাররম হোসেন ও মখলেসুর রহমান।

এদিকে দলীয় প্রতীকে এবং দলীয় মনোয়নের মধ্য দিয়ে একক প্রার্থী হওয়ার বিধান হয়েছে এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। স্থানীয় নেতারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন আসলে কীভাবে প্রার্থী বাছাই করা হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন রাজনেতিক দলের একাধিক প্রার্থীরা নিজেদের প্রতি দলীয় সমর্থন নেওয়ার জন্য ভোটারদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ১ম সারির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

অন্যদিকে জেলা, উপজেলা ও পৌর পর্যায়ের নেতারাও রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে কারণ তারাও দলীয়ভাবে কোনো দিকনির্দেশনা পাননি প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণ বিষয়ে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনোয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্বান্তহীনতায় ভোগে সময় বিলম্ব করে তাহলে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষের সম্ভানা দেখা দিতে পারে কারণ তারা অনেক আগে থেকেই টাকা-পয়সা খরচ করে বিলবোর্ড দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যদি তফসিল ঘোষণার পূর্বে একক প্রার্থী বাছাই করে নিতে পারে তাহলে অনেকটা ঝামেলামুক্ত হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এমএএস/আরআইপি