রেজিস্ট্রিও হচ্ছে কেডিএর ‘ভাগবাটোয়ারা’ করে নেয়া ৩২ প্লটের
বাজার মূল্যের চেয়ে উচ্চমূল্যে প্লট বিক্রি, কিস্তির সঙ্গে অতিরিক্ত সুদ আদায়, প্লটের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রেখে প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ নেয়ার পর এবার ৩২টি প্লট ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এই প্রকল্পের দুই ক্যাটাগরির ৬৫৩ প্লটের মধ্যে বিক্রি করা ৬২১টি প্লটের একটিও রেজিস্ট্রি না হলেও ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া প্লটগুলোর রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পের এসব প্লট বরাদ্দের তালিকায় রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সদ্য ও সাবেক চেয়ারম্যানসহ ও সরকারের উচ্চ পদস্থ কমকর্তার পাশাপাশি কয়েকজন সংসদ সদস্যও। কেডিএ চেয়ারম্যানের বিদায়ের মাত্র ১০ দিন আগে তড়িঘড়ি করে প্লট বরাদ্দের এই প্রক্রিয়াকে অস্বচ্ছ বলছে টিআইবি।
কেডিএর সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল মুকিম সরকার, সাবেক চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আহমেদুল কবীর, কেডিএর পরিচালক ড. শাহানুর আলম, পরিচালক এস্টেট ছাদেকুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী মুনতাসির মামুন ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পের ৫ কাঠার প্লট পেয়েছেন।
তিন কাঠার প্লট পাওয়া থেকে বাদ যাননি কেডিএর অফিস সহকারী, অংকনবিদ, মসজিদের ইমাম, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি এমনকি পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তাকর্মীও। তালিকায় রয়েছেন একাধিক সচিব ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কমকর্তারাও।
এই ৩২টি প্লটের মধ্যে ১০ জানুয়ারি রেজিস্ট্রি হওয়া ৪টির মধ্যে ৩টি ডুমুরিয়া আর ১টি বটিয়াঘাটা অফিসে রেজিস্ট্রি হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বোর্ড সভার একাধিক সূত্র জানায়, ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পে মোট ৬৫৩টি প্লটের মধ্যে ৩২টি প্লট অবশিষ্ট ছিল। গত ২০ ডিসেম্বর কেডিএর বোর্ড সভায় তড়িঘড়ি করে সব কয়টি প্লটই বরাদ্দ দেয়া হয়।
সভায় উপস্থিত থাকা এক বোর্ড সদস্য জানান, ‘গোটা প্রক্রিয়াটাই ছিল পরিকল্পিত।’
কেডিএর বোর্ড সদস্য আকরাম হোসেন বলেন, আগে থেকেই সব কমপ্লিট করে রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব, সচিবের পিএস, এপিএসের নামে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সনাক-টিআইবি খুলনার সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, কেডিএতে কখনোই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গা ছিল না। যার কারণে এমন অনিয়ম ও বিধি বহির্ভূত কাজ হরহামেশাই ঘটছে।
তবে এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে সবকিছু নিয়মমাফিক হয়েছে বলে দাবি করেন কেডিএর এস্টেট শাখার পরিচালক মো. ছাদেকুর রহমান।
তিনি বলেন, সব কিছু হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই এই প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেডিএ প্রশাসন ও বোর্ড সদস্যরাও এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কেডিএর ৮৭ দশমিক ৭১৫ একর জমির ওপর নির্মিত ময়ূরী আবাসিক প্রকল্পে ৫ কাঠার প্লট ২৬৯টি আর তিন কাঠার ৩৮৪টি প্লট রয়েছে।
আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম