ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

চাঁদপুর জাতীয় পার্টির হ-য-ব-র-ল অবস্থা

জেলা প্রতিনিধি | চাঁদপুর | প্রকাশিত: ১১:৪৪ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০

দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম। কিন্তু সেই কার্যক্রমটা কী সেটা নিয়েও নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হলেও সম্মেলন আর করা হয়নি। এরপর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তিনবার চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।সবশেষ ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ১৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আর সেই কমিটিতেই চলছে কার্যক্রম!

এরমধ্যে চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও চাঁদপুর পৌর কমিটি ভেঙেছে কিন্তু গঠন করার কথা আর শোনা যায়নি। অপরদিকে ফরিদগঞ্জে একসদস্য বিশিষ্ট কমিটিতেই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ! মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলাতেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা। হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়ায় কার্যক্রম নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ বলেই জেলা পর্যায়ের নেতারা মনে করেন।

সম্মেলন বা নতুন কমিটি না হওয়ায় জেলা জাতীয় পার্টির নেতা কর্মী সমর্থকদের মাঝে চরম হতাশা আর ক্ষোভ বিরাজ করছে। পূর্বে যারা জাতীয় পার্টির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা দলকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানালেও কে শোনে কার কথা?

যদিও পদপঞ্চিত নেতা কর্মীরা শহরে দুই একটি কর্মসূচি পালন বা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন সীমিত পরিসরে। তবে আহ্বায়ক কমিটির তরফ থেকে এমন কোনো কার্যক্রমও দেখা যায় না। আবার ব্যক্তি বিশেষের চেম্বারে চলে চায়ের আড্ডা, যা চালিয়ে দেয় দলীয় কর্মসূচি হিসেবে।

মূলত জেলা জাতীয় পার্টির গুরুজন এবং চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজীর মৃত্যুর পরই যেন চাঁদপুরে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দলটি। এখন যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন তারা শুধু পদ দখল করেই আছেন বলে অভিযোগ কর্মী সমর্থকদের।

সর্বপরি চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি প্রকাশ্যে বিরাজমান। সম্প্রতি আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে পদ বঞ্চিতরা পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছেন। এ নিয়ে একনিষ্ঠ জাতীয় পার্টির কর্মী সমর্থকরা আছেন বিপাকে। বিবাদমান এ পরিস্থিতি কেন্দ্রের বিশেষ ব্যক্তিদের অবহিত করা হলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। এ নিয়ে স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝেও তৈরি হচ্ছে অভিমান।

অপরদিকে চাঁদপুর জেলা যুবসংহতির সম্মেলন চলতি বছরের ৭ নভেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আপত্তির প্রেক্ষিতে তা আর করা হয়নি। উল্টো ১৯ ডিসেম্বর ২৪ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। এ কমিটি গঠন নিয়েও ত্যাগী নেতাদের প্রশ্ন ছুঁড়তে দেখা গেছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর ১ মার্চ ২০১৬ সালে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি, ২৯ মে ২০১৭ সালে ৫৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি এবং ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ১৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতেই চলছে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টি।

সর্বশেষ কমিটির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খানকে সম্বনয়কারী এবং ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. এমরান হোসেন মিয়াকে আহ্বায়ক, নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজী ও আলহাজ্ব শেখ আব্দুল মান্নানকে উপদেষ্টা করে জাতীয় পার্টির চাঁদপুর জেলা শাখার ১৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়।

মতলব উত্তর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক কাইয়ুম খান বলেন, বিভিন্ন কারণে উপজেলা কমিটিতে পদ নিইনি। কারণ যাদের নিয়ে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের দলের সদস্য হওয়ার যোগ্যতাও নেই। তিনি মন মতো কমিটি গঠন করে নিচ্ছেন। যারা দুঃসময়ে জাতীয় পার্টিকে ধরে রেখেছে তারা বঞ্চিত হোক আমি তা চাই না। সে সমস্ত নেতা কর্মীদের ছাড়া আমি দল করতে পারব না। তিনি পুরাতন কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করেছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মহসীন খান জানান, বর্তমান আহ্বায়ক স্বেচ্ছাচারীভাবে সংগঠন চালাচ্ছেন। তিনি দলের প্রতিষ্ঠিত, ত্যাগী ও সাংগঠনিক নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের বলয়ের মধ্যে সংগঠন চালানোর চেষ্টা করছেন। যা ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সংকট তৈরি করতে পারে।

চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আলহাজ্ব মো. এমরান হোসেন মিয়া জাতীয় পার্টির যুবসংহতির নতুন আহ্বায়ক কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, হাতের আঙুলতো সব এক নয়। অনেকে অনেক কথা বলতে পারে।

জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিটি যখন হবে আপনারাতো খবর পাবেনই। আমরা খবর দেব। আমরা করোনাকালীন সময়ে ডিসি এসপির কাছ থেকে অনুমতি পাচ্ছি না। প্রায় একবছর যাবৎ ঘুরছি। সম্মেলনতো আর ঘরে বসে করা যাবে না। আমাদের সম্মেলনে দুই-তিন হাজার লোক হবে।

ডিসি বা এসপির কাছে আবেদন করা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, না না, এখন করব কেন? ডেট দিয়েই না আবেদন করব।

নজরুল ইসলাম আতিক/এফএ/এমএস