‘১ মণ মুলা বেচে ১০০ গ্রাম চালও হচ্ছে না’
শীতকালীন সবজি মুলা চাষ করেছেন লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার কৃষক। কিন্তু মুলা কেউ কিনতে না আসায় হতাশায় পড়েছেন হাজারও কৃষক। ফ্রি দিলেও কেউ মুলা নিচ্ছেন না।
এদিকে জমি পরিষ্কার করতে না পারায় একই জমিতে আলু রোপণে দেরি হয়ে যাচ্ছে। কারণ মুলার কোনো ক্রেতা নেই। যারা আসছেন প্রতি মণ ১০-১৫ টাকা বলছেন। ফলে মুলাই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলার কৃষকদের। আলু রোপণের স্বার্থে তারা এখন পাইকারদের বিনামূল্যে মুলা দিয়ে দিচ্ছেন।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, পাঁচ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমিতে আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে কতটুকু জমিতে মুলা চাষ হয়েছে তা জানা না গেলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে মুলা চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
লালমিনরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণে মুলাসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে জেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মুলা প্রকারভেদে ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে। কৃষকও লাভবান হয়েছেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটেছে গত ১৫ দিন থেকে। খেতের মুলা খেতেই নষ্ট হচ্ছে। এখন ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষক।
খুচরা বাজারে ২-৩ টাকা কেজি হলেও পাইকারিতে ১০-১৫ টাকা মণও নিচ্ছে না। ফলে খেত থেকে মুলা তুলতে যে শ্রমিক খরচ, তাও উঠছে না কৃষকের।
আক্ষেপ করে চাষিরা বলছেন, আগাম মুলা নষ্ট হয়েছে বৃষ্টি-বন্যাতে। দ্বিতীয় দফায় ফলন ভালো হলেও দাম নেই। এক মণ মুলা বেঁচে ১০০ গ্রাম চালও কেনা যাচ্ছে না। এখন বাজারে প্রতি কেজি সাধারণ মানের আটাশ চালও কিনতে লাগে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা।
আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, মুলা নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রতি দোন জমির (২৭ শতক) মুলা বিক্রি করেও এক হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মুলার ক্রেতা নেই। এদিকে পরের ফসল আবাদের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আলু ও ভুট্টা লাগানোর জন্য ব্যবসায়ীদের অনেকে বিনামূল্যে মুলা দিচ্ছেন। তারা নিজ খরচে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
পাটগ্রাম উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘মুলা শুরুতেই ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বর্তমানে কোনো পাইকার মুলা কিনছেন না। তাই খেতেই নষ্ট হচ্ছে মুলা।’
সীমান্তবর্তী দুরাকুটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা ট্রাক্টর দিয়ে মুলাখেত নষ্ট করছেন।
এক চাষি বললেন, ‘এবার ১০ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছি। প্রথমবার ৪৫ ও দ্বিতীয়বার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দাম না পাওয়ায় নিজেই মুলা নষ্ট করছি। ভুট্টা-আলু লাগালে হয়তো ক্ষতি কিছুটা পোষানো যাবে।’
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামীম আশরাফ বলেন, ‘রবি মৌসুমে বেশিরভাগ চাষি মুলা আবাদ করেছেন। বাজারে চাহিদা না থাকায় তারা দাম পাচ্ছেন না।’
‘যেকোনো ফসল ফলানোর আগে চাহিদার বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে বারবার বলার পরও কৃষকরা আমলে না নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে’-বলেন এই কর্মকর্তা।
রবিউল হাসান/এসআর/এমএস