ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বিজয়ের দুইদিন পর শত্রুমুক্ত হয় রাজবাড়ী

জেলা প্রতিনিধি | রাজবাড়ী | প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

১৬ ডিসেম্বর সারাদেশ যখন বিজয়ের আনন্দে ভাসছে তখনও রাজবাড়ীতে চলছে বিহারী, পাকবাহিনী ও রাজকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমল যুদ্ধ। পরবর্তীতে আশপাশের জেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এসে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার সাথে সংগঠিত হয়ে ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ীকে শত্রুমুক্ত করে অর্থাৎ সারাদেশ স্বাধীন হওয়ার দুইদিন পর রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়।

সারাদেশ বিজয় উদযাপন করে ফেললেও রাজবাড়ী শহর তখনো বিহারীদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি। তারপর জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিবাহিনী এসে শহরে সংগঠিত হয়।

COLLAGE1

এ খবরে বিহারীরা রেললাইনের পাশে অবস্থান নেয় এবং মালগাড়ি দিয়ে এক দেয়াল তৈরি করে। সেসময় মুক্তিযোদ্ধারা বিহারীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করলেও মালগাড়ির কারণে তা আঘাত করতে বিফল হয়। এরপর যশোর থেকে আনা মর্টার দিয়ে গোলা বর্ষন শুরু করলে বিহারীদের সঙ্গে তাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। একপর্যায় বিহারীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়।

রাজবাড়ী জেলায় ৩৭৯ জন মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেন।

COLLAGE1

অবাঙ্গালী বিহারীদের বসবাস ছিল শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনি, স্টেশন কলোনি ও লোকোশেড কলোনি এলাকায়। পাকিস্তান আমলে পুরো রেলটাই ছিলো তাদের দখলে। পাকবাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারীরা তাদের সাথে মিলে নির্বিচারে চালাতে থাকে নির্যাতন।

প্রথম ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল রাত ৩টার দিকে আরিচা থেকে বেলুচ রেজিমেন্টের মেজর চিমারের নেতৃত্বে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী। এ থেকেই যুদ্ধের শুরু রাজবাড়ীতে।

COLLAGE1

আলীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত হাসান জানান, মুক্তিযুদ্ধে দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময় দেশ বিজয় অর্জন করে ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজবাড়ী তখনও অবাঙ্গালী বিহারীদের কবলে। সেই বিহারীদেরকে তুমুল যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করতে দুই দিন সময় বেশি লাগে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার, সাবেক জেলা কমান্ডার আবুল হোসেন ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার কামরুল হাসান লালী জানান, রাজবাড়ী রেলের শহর। এরফলে রাজবাড়ীতে বিহারীদের প্রভাব বেশি ছিল এবং যুদ্ধের সময় তাদের সঙ্গে আরও যুক্ত হয় পাকাবাহিনী ও রাজাকাররা। ১৪-১৮ ডিসেম্বর সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে রাজবাড়ীকে শত্রুমুক্ত করা হয়। এ সময় আব্দুল আজিজ খুশিসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও অনেকে আহত হন।

COLLAGE1

তবে বিজয়ের আজ কয়েক দশক হতে চললেও এখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিফলক, বধ্যভূমি ওশহীদদের কবর। তাই শুধু বিজয়ের মাসেই না, সারাবছর এসব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংরক্ষণের দাবি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের। এছাড়া রাজবাড়ীর বধ্যভূমিতে যাবার একটি রাস্তা তৈরির অনুরোধ জানান তারা।

রুবেলুর রহমান/এসএমএম/এমএস