ভোমরা বন্দরে ফল আমদানি কমেছে, বেড়েছে পাথরের
করোনার প্রাদুর্ভাবে টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এখনো বন্ধ রয়েছে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার। ভোমরা বন্দর দিয়ে এখন বেশি আমদানি হচ্ছে পাথর, রফতানি হচ্ছে ধানের কুড়ার তেল।
ব্যবসায়ীরা ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বন্দরটি এখন পাথরের বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে। পাথর আমদানির ওপর দিয়েই চলছে ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি কার্যক্রম। প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হচ্ছে আড়াই কোটি টাকা।
ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নভেম্বর মাসে ভোমরা বন্দরে আমদানি পণ্যের ওপর রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪১ টাকা। আমদানি পণ্য ও মালামালের মধ্য সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে পাথর। প্রতিদিন পাথর আমদানি হয়েছে ২২০-২৩০ ট্রাক। সবমিলিয়ে এ মাসে ৬ হাজার ৮১০ ট্রাক পাথর আমদানি হয়েছে, যা অন্য সব পণ্যের তুলনায় রেকর্ড সংখ্যক। পাথরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৫০ টাকা।
এদিকে রফতানি হয়েছে বেশি কুড়ার তেল ১২৭ ট্রাক, প্রাণ গ্রুপের পণ্য ৫৪ ট্রাক, পাটের সুতা ৪৭ ট্রাক। তবে রফতানি পণ্যের ওপর রাজস্ব আদায় করা হয় না।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর এখন ভোমরা বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। আগের মতোই ৩০০-৩৫০ ট্রাক পণ্যবাহী গাড়ি বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে পাথর। এছাড়া সামান্য কিছু ফল (আঙুর, কমলা), শুকনা মরিচ, আদা, হলুদ, সিরামিক কাঁচামাল, মসলা আইটেম রয়েছে। বন্দর দিয়ে সবমিলিয়ে ২৬টি পণ্য আমদানি হলেও সেটি নিয়মিত হচ্ছে না।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মাকসুদ খান বলেন, ‘বন্দরটি এখন পাথরের বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে। পাথর ছাড়া অন্য মালামাল খুব বেশি আসছে না। আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে সরকার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায় ফলের ওপর। তবে সেই ফলই এখন ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি হয় না উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। প্রতিদিন ২০-৩০ ট্রাক ফল আসছে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ২৫ মার্চ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত টানা তিনমাস করোনায় বন্ধ ছিল ভোমরা বন্দর। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে এখনো বন্ধ রয়েছে পেঁয়াজ আমদানি। আগে প্রতিদিন পেঁয়াজ আমদানি হতো ৭০-৮০ ট্রাক। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় পেঁয়াজের সেই স্থানটিও দখল করে নিয়েছে পাথর।’
প্রতিদিন ৩৬০-৩৬৫ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে জানিয়ে ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আকবর আলী বলেন, ‘ভারতে রফতানি হচ্ছে ৪০-৫০ ট্রাক পণ্য। রফতানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে কুড়ার তেল, প্রাণ গ্রুপের কিছু পণ্য ও পাটের সুতা। এখন পাথর আমদানি হচ্ছে বেশি। নভেম্বর মাসে পাথরের গাড়ি এসেছে ছয় হাজার ৮১০টি। ডিসেম্বর মাসে (৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এসেছে এক হাজার ৯৩১টি পাথরবাহী ট্রাক। নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র পাথরের ওপর রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৫০ টাকা। চলতি ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাথরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫১ টাকা। বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক। তবে পাথরের ওপরে চলছে বন্দরটি।’
ভোমরা বন্দরের শুল্ক স্টেশন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আমির মামুন জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে বন্দরের আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি আমদানি করছেন পাথর। এছাড়া অন্যান্য পণ্যগুলো কম আমদানি হচ্ছে। প্রতিদিন ৩৬০-৩৬৫ পণ্যবাহী ট্রাকে আমদানি ও রফতানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ফলমূল আমদানি বেশি হলে রাজস্ব আদায় বেশি হয়, পাথরে বেশি রাজস্ব হয় না। প্রতি টন পাথরে রাজস্ব আদায় করা হয় ৭৭৫ টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন সব পণ্যের ওপর রাজস্ব আদায় হচ্ছে গড়ে আড়াই কোটি টাকা।’
ভোমরা ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিত সরকার জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত এখনো ভোমরা বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। কবে চালু হবে সেটিও জানা নেই।
আকরামুল ইসলাম/এসআর/এমকেএইচ