লাখ লাখ টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠ পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কলেজের অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৩ নভেম্বর অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন পাংশা সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক একেএম শরিফুল মোর্শেদ আরুজ।
যার প্রেক্ষিতে পাংশা সরকারি কলেজের প্রফেসর নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু অভিযুক্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আর অগ্রগতি হয়নি তদন্ত কার্যক্রমের।
লিখিত মোট ১১টি অভিযোগ করা হয় অধ্যক্ষ মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো হলো- ২০১৯ সালের ৩ জুন এবং একই বছরের ২ জুলাই কলেজ ফান্ড হতে যথাক্রমে ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫০ টাকা ও ২২ লাখ ৪২ হাজার ৯৪০ টাকা এবং এরপর ২১ লাখসহ মোট ৮৩ লাখ ৮ হাজার ৫৯০ টাকা পৌরকর পরিষদের নামে ব্যয় দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে পৌরকর প্রদান করা হয়েছে ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫০ টাকা। বাকী টাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরী নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
শিক্ষকদের জাতীরকরণের নামে তিনি ঘুষ নিয়েছেন ৯ লাখ এবং বেতন করানো বাবদ বিভিন্ন সময়ে নিয়েছেন আরও ২০ লাখ টাকা।
কারণে অকারণে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাদের শোকজ করেন এবং অধ্যক্ষের নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত করে বিএনসিসি দিয়ে গার্ড অব অর্নার প্রদান করেন।
একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদের কোনো তোয়াক্কা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন।
বাজেট প্রণয়নের নামে ভুয়া কমিটি গঠন করে হাতিয়ে নিয়েছেন ৯ লাখ টাকা।
অনলাইন ফিসের নামে পরিপত্র অনুযায়ী সরকারিভাবে একবার ২০ টাকা আদায় করা হলেও পরবর্তীতে ছাত্র/ছাত্রী প্রতি ২০০ টাকা আদায় করেছেন। এছাড়া অনার্স-মাস্টার্স ছাত্র/ছাত্রীদের চিঠি ইস্যু করে আদায় করেছেন জরিমানা।
ক্যাম্পাসের আধুনিক আসবাবপত্র সজ্জিত বাসায় বসবাস করেও বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করেন। এছাড়া পারিবারিক প্রয়োজনে ক্যাম্পাসের দুটি বড় মেহগনি গাছ কেটে নিয়েছেন।
বিভিন্ন কমিটির প্রধান হয়ে মোটা অংকের টাকা নেন। যেমন বাজেট কমিটি গঠন করে নিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এভাবে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটি থেকে সরকারিভাবে ৫ হাজার টাকা নেয়ার কথা থাকলেও নেন ৭৫ হাজার টাকা।
কলেজের শিক্ষকরা সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময় বেসরকারি আমলে গৃহীত কলেজ অংশের টাকা ফেরদ দেন প্রায় পৌনে ২ কোটি। এরসঙ্গে কলেজের বিবিধ তহবিলের টাকা। সব মিলিয়ে যে পরিমাণ ব্যাংক স্থিতি রয়েছে তাতে মোটাদাগের হিসাব দেখা যায় পার্থক্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এই টাকা তিনি (অধ্যক্ষ) নয় ছয় করেছেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে তিনি কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তিনি বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
পাংশা সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক একেএম শরিফুল মোর্শেদ আরুজ জানান, ১১টি অভিযোগ এনে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বরাবর পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। যার প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর প্রফেসর নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও অভিযুক্ত অধ্যক্ষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় তদন্ত প্রতিদেন পেতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার স্ত্রী জানান, আতাউল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি কারো সঙ্গে কথা বলবেন না।
রুবেলুর রহমান/এফএ/জেআইএম