ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে হতাশ তারামন বিবির ছেলে

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২০

একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের আজকের এই দিনে তিনি কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় নিজ বাড়িতে মারা যান।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাজীবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে বাদ এশা পারিবারিকভাবে ও বাদ আছর কুড়িগ্রামের আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার গুচ্ছপাড়া গ্রামের বাড়িতে কোরআন খতমসহ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছেলে আবু তাহের।

বীর প্রতীক তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের জানান, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন আমার মা তারামন বিবি। কিন্তু একাত্তরের রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি হতাশ।

তারামন বিবি ছিলেন রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সোবহানের সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান। তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রান্না করতেন ১৪ বছর বয়সী তারামন। রান্না করতে করতে অস্ত্র চালাতে শেখেন। তারপর রান্নার খুন্তি ফেলে রাইফেল হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন সম্মুখ সমরে।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হলেও সে কথা তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর জানতে পারেননি। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী এবং রাজিবপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকীর সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করেন।

এরপর ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেয়া হয়। বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন তারামন বিবি।

তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে। ১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১নং সেক্টরে নিজ গ্রামে ছিলেন। তখন ১১নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের।

মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন, যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তারামনকে ক্যাম্পে রান্নার জন্য নিয়ে আসেন তিনি। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর।

পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান। এরপর একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন।

এরপর তারামন অনেক সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। এ কারণে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।

তারমন বিবির ছেলে জানান, আমি নিজ উদ্যোগে পারিবারিকভাবে রাজীবপুরের বাড়িতে বাদ এশা কোরআন খতম, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি। এছাড়া কুড়িগ্রাম আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার বাড়িতে আমার মামা হাসান বাদ আছর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন।

রাজীবপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমাদের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। সকল মুক্তিযোদ্ধা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। বীর প্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।

এ বিষয়ে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবিরুল ইসলাম বলেন, বীর প্রতীক তারামন বিবির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারী কোনো আনুষ্ঠানিকতার নির্দেশনা নেই। তাই উপজেলা প্রশাসনের এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।

মাসুদ রানা/এফএ/জেআইএম