পরকীয়ার অভিযোগে স্ত্রীর পায়ের রগ কাটায় কারাগারে স্বামী
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগ তুলে হ্যাপী আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনায় করা মামলায় স্বামী মো. রাসেল বালীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার (০৯ নভম্বের) দুপুরে বানারীপাড়া থানা পুলিশ তাকে বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেন। আদালতের বিচারক সাব্বির মো. খালিদ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রাসেল বালী বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের হাওড়া বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান বালীর ছেলে।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ হ্যাপী আক্তার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের হাওড়া বাড়ি এলাকার মো. রাজ্জাক হাওলাদারের মেয়ে। ১০ বছর আগে একই এলাকার রাসেল বালীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এই দম্পতির আট বছরের এক মেয়ে ও তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে।
হ্যাপী আক্তার বলেন, বিয়ের সময় বাবার বাড়ির পক্ষ থেকে যৌতুক হিসেবে কয়েক ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র দেয়া হয়। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামী রাসেল বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দিতে আমাকে চাপ দিতে থাকেন এবং নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে ৪৭ হাজার টাকা এনে দেই। কিন্তু আরও টাকা এনে দিতে বলেন রাসেল।
হ্যাপী আক্তার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলাম। রাসেলকে বারবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করি। তবে আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা না পাঠালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে না বলে রাসেল জানিয়ে দেন। চারদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়ি। শুক্রবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এক চিকিৎসককে দেখান। চিকিৎসক এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে রিপোর্ট দেখাতে বলেন। তবে রাসেল শুধু আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
ওই দিনই আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরদিন শনিবার (৩ অক্টোবর) সকালে রাসেলকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করি। এবারও টাকা না এনে দিলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে না বলে রাসেল জানান। এরপর মেয়ে রিমিকে বাড়িতে রেখে ছেলে রাতুলকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি পেছনে স্বামী রাসেল ও শ্বশুর হাসান বালী আসছেন। এ সময় রাসেলের হাতে গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি ছিল। ভয় পেয়ে রিকশাচালককে দ্রুত চালাতে বলি। সরকারি বানারীপাড়া মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (পাইলট) সংলগ্ন সড়কে তারা আমাকে ধরেন। রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে আমাকে মারধর করেন তারা।
এ সময় রাসেলের কিল-ঘুষিতে আমি সড়কের ওপর পড়ে যাই। শ্বশুর হাসান বালী আমার হাত ধরে রাখেন এবং স্বামী রাসেল তার সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আমার বাম পায়ের রগ কেটে দেন। আমি ও ছেলে রাতুলের চিৎকার শুনে পথচারীরা এগিয়ে এলে রাসেল ও শ্বশুর হাসান বালী পালিয়ে যান।
পরে পথচারীরা আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্ত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল বালী বলেন, আমি ধান-চালের ব্যবসা করি। ব্যবসার কারণে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। দূরে গেলে সেদিন রাতে আর ফেরা হয় না। সেই সুযোগে স্ত্রী হ্যাপী অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে গড়ে। তার একাধিক পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। শনিবার তার এক পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে বাধা দিতে গেলে আমাকে গালাগালি ও মারধর শুরু করে। বাবা তাকে থামাতে হাত ধরেছিলেন। এ সময় হ্যাপী আমাকে লাথি মারে। রাগে আমি ছুরি দিয়ে বাম পায়ে আঘাত করি।
স্বামীর অভিযোগ প্রসঙ্গে হ্যাপী আক্তার বলেন, আমাকে জড়িয়ে পরকীয়ার যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা। আমাকে রাসেল ছুরি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি যেন মামলা না করি রাসেল সেজন্য এসব রটাচ্ছে।
এ ঘটনায় ৪ অক্টোবর গৃহবধূর বাবা মো. রাজ্জাক হাওলাদার বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় মেয়ের জামাই রাসেল বালী, শ্বশুর হাসান বালী, শাশুড়ি খাদিজা বেগম ও চাচাতো দেবর জসিমকে আসামি করে মামলা করেন।
বানারীপাড়া থানা পুলিশের ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, মামলার পর আত্মগোপনে চলে যান রাসেল বালী। পুলিশ রাসেল বালীকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। রাসেল বালী বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঢাকায় চলে যান। রোববার রাতে ঢাকা থেকে গোপনে গ্রামে আসেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাসেল বালীর অবস্থান জানতে পেরে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় রাসেল বালীকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার দুপুরে তাকে বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
সাইফ আমীন/এএম/এমএস