ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ডিমলায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৭:২৮ এএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৫

ডিমলায় রেজিনা আক্তার (২০) নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তার হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। মরদেহের ময়নাতদন্তে তাকে শারীরিক আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়।

রেজিনা আক্তার মৃত্যুর একমাস পর শনিবার রাতে মেয়েটির বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে ডিমলা থানায় মামলা দায়ের করেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ৬ অক্টোবর রাতে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী রেজিনা আক্তারকে যৌতুকের টাকার জন্য লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হলে তার পরিবারকে হৃদরোগে মারা গেছেন মর্মে সংবাদ দেয়। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা এসে দেখতে পান রেজিনার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এ ব্যাপারে মেয়ের বাবা রফিকুল ইসলামের অভিযোগে ডিমলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহালে আঘাতের চিহ্ন পায়।

নীলফামারী সদর হাসপাতালে রেজিনার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। মরদেহে আঘাতের চিহ্ন থাকায় পুলিশ ওই গৃহবধূর বাবা রফিকুল ইসলাম একটি হত্যা মামলা করেন। রেজিনাকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট থানায় এসে পৌঁছায়।

উক্ত ঘটনায় ডিমলা থানায় মামলা ২২/১৫ নং অপমৃত্যু মামলা হয়। ঘটনার দিন মেয়েটির বাবা রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা করতে গেলে পশ্চিম ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক সরকার বিরোধিতা করে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করতে বাধ্য করেছিলেন। আসামিরা ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিবেশী ও আত্মীয় হওয়ার সুবাদে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

শনিবার দুপুরে ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমীনসহ উপ-পরিদর্শক সাহাবুদ্দিন ও তাজুল অভিযান চালিয়ে স্ত্রী হত্যাকারী রেজাউল করিমকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ঠাকুরগঞ্জ গ্রামের গত ৬ অক্টোবর রাতে যৌতুকের এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দিতে না পারায় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন পাষণ্ড স্বামী।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাতনাই গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে রেজিনা আক্তারের সঙ্গে একই ইউনিয়নের ঠাকুরগঞ্জ গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে রেজাউল করিমের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় রেজিনার পরিবার জামাতাকে নগদ দুই লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ও একটি হিরো হোন্ডা মোটরসাইকেল যৌতুক বাবদ প্রদান করেন। বিয়ের কয়েক মাস পর হতে রেজাউলসহ তার পরিবারের লোকজন রেজিনাকে বাবার বাড়ি হতে আরও এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা আনতে শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। এরই মধ্যে রেজিনার কোলে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয় মনি (৪ মাস)।  

শনিবার রাতে রেজিনার বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ডিমলা থানায় মামলা নং-৪ দায়ের করে। রেজিনার স্বামী রেজাউল করিম (২৪), ভাই সাজু মিয়া (২১), নুরুজ্জামান মনি (১৮), বাবা এমদাদুল হক (৫০), মাতা রেজিনা বেগম (৪২) ও মামা মোস্তাকিন ইসলাম (৩৫) আসামি করেছে।

রেজিনার বাবা রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমার মেয়ে রেজিনাকে জামাতা, তার দুই ভাই, মেয়ে শ্বশুর, শাশুড়ি ও মামা শ্বশুর পরিকল্পিতভাবে যৌতুকের কারণে হত্যা করে। ডিমলা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যৌতুকের কারণে রেজিনাকে হত্যার মূল আসামি রেজাউল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। রেজিনার স্বামীকে পাঁচদিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

ডিমলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রহুল আমিন খান জাগো নিউজকে বলেন, রেজিনার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ছয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩ এর ১১ (৪) ) ধারায় যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রেজাউল ইসলামকে রোববার আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।
 
জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/এমএস