ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে পাওনাদারের হাতে স্ত্রীকে তুলে দিলেন স্বামী

জেলা প্রতিনিধি | মাগুরা | প্রকাশিত: ০৩:২৮ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০২০

মাগুরায় সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এক পাষণ্ড স্বামী তার স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে পাওনাদার ইসমাইল ওই গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে বিয়েও করেন।

এরপর তার ওপর চলতে থাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে এক পর্যায়ে সুদখোর স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে তাকে তালাক দেন ওই গৃহবধূ। তারপরও ওই নারীর পিছু ছাড়ছে না ওই ব্যক্তি। বাধ্য হয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য ওই নারী দারস্থ হয়েছেন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে।

তবে প্রথম স্বামী বলছেন, তিনি নিজ ইচ্ছায় তার স্ত্রীকে পাওনাদারের হাতে তুলে দেননি। বরং দাবিকৃত সুদের টাকা দিতে না পারায় পাওনাদার তার স্ত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যান।

এদিকে অভিযুক্ত ইসমাইল বলেন, স্বেচ্ছায় ওই নারী তাকে বিয়ে করেছেন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা জটিল এই বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছেন।

তবে মীমাংসা চলমান থাকায় বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা।

এদিকে জেলা মহিলা পরিষদের নেত্রী বলছেন, বর্তমান যুগে বিষয়টি অকল্পনীয়। তারা ওই অসহায় নারীর পাশে থেকে তাকে সহায়তার করবেন।

সদর উপজেলার মনিরামপুর গ্রামের নির্যাতিতা ওই নারী জানান, ৮ বছর আগে তার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী সুজয় বিশ্বাসের সঙ্গে। বিয়ের এক বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। ছোটখাট টানাপোড়েন থাকলেও সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে তারা ভালোভাবেই সংসার জীবন অতিবাহিত করছিলেন।

বছর দু’য়েক আগে হঠাৎ করে তিনি জানতে পারেন একই এলাকার ইসমাইল মন্ডলের কাছ থেকে তার স্বামী সুদে টাকা ধার নিয়েছেন। ইসমাইলের দাবি অনুযায়ী সুদে আসলে যার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা। ইসমাইল তার স্বামীকে টাকার পরিশোধের জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন।

মূল টাকা পরিশোধ করলেও তার স্বামী দাবিকৃত মোটা অংকের সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে ইসমাইল টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীকে (তাকে) তার হাতে তুলে দিতে বলেন। ইসমাইলের চাপে পড়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে তার স্বামী যশোর নিয়ে ইসমাইলের হাতে তুলে দেন।

এরপর তাকে ধর্মান্তরিত করে ইসমাইল বিয়ে করে প্রথমে ঢাকা নিয়ে একটি বাসায় আটকে রাখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। মাস দু’য়েক পর ইসমাইল তাকে মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে ইসমাইল এবং তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে ওই নরীর ওপর নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।

তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি প্রায় পাঁচ মাস আগে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন এবং ইসমাইলকে দুই মাস আগে তালাক দেন। বর্তমানে তিনি মাগুরা শহরে এক নারীর আশ্রয়ে থেকে একটি ক্লিনিকে সেবিকার চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তবে তালাক দিলেও ইসমাইল তার পিছু ছাড়ছেন না। ফোনেসহ তার কর্মস্থলে এসে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ অবস্থায় তিনি ইসমাইলের হাত থেকে মুক্তি পেতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিষয়টি মীমাংসার জন্য আবেদন করেছেন।

ওই নারীর প্রথম স্বামী সুজয় বিশ্বাস দাবি করেন, তিনি ইসমাইলের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিলেন, তা পরিশোধ করে দেন। তারপরও ইসমাইল তার কাছে সুদে আসলে ৯ লাখ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ডাক্তার দেখাতে গেলে ইসমাইল যশোর থেকে তাকে মারধর করে স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।

তবে অভিযুক্ত ইসমাইল বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি সুদের ব্যবসা করেন না। ওই নারীকে তিনি জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেননি। সে স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়ে করেছে। এখন তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান।

এ বিষয়ে জেলা লিগ্যাল এইড-এর আইনজীবী নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শাহিনা আক্তার ডেইলী বলেন, আইনগতভাবে তালক দিলে কোনো নারীকে তার স্বামী আর স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারেন না। তাছাড়া তালাক দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তা এমনিতেই কার্যকর হয়ে যায়। তালাক দেয়ার পরও যদি কোনো ব্যক্তি তার সাবেক স্ত্রী উত্যক্ত বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন, তবে সেটা বড় ধরনের ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে বিচেচিত হবে।

জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী মমতাজ বেগম বলছেন, বর্তমান সময়ে সুদের কারণে একটি নারীর ওপর যে অন্যায়, অত্যাচার করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। নারী কোনো ভোগ্যপণ্য বা সম্পদ নয়, যা অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করা যায়। মহিলা পরিষদ অসহায় ওই নারীর পাশে থেকে তাকে সহায়তা প্রদান করবে। ওই নারী চাইলে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

জেলা পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, ওই নারী এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি অভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলেও নিশ্চিত করেছে পুলিশের এ কর্মকর্তা।

মো. আরাফাত হোসেন/এমআরএম