ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পুনরায় ময়নাতদন্তের পর রায়হানের লাশ দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদক | সিলেট | প্রকাশিত: ০৭:১২ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২০

সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের মরদেহ পুনরায় ময়নাতদন্তের পর দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

দুপুরে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে রায়হানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ময়নাতদন্তে গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

বিকেলে পুলিশের একটি দল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিসবাহ উদ্দিন ও সজিব আহমদের নেতৃত্বে আখালিয়াস্থ এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েত গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বিকেল সাড়ে ৪টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রায়হানের মরদেহ পুনরায় ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। তদন্তের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করেছি। এখন আসামিদের গ্রেফতার কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

দাফনের পর স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ী এবং নিহতের পরিবারের সদস্যরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে আসামিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত হলে বিক্ষুব্ধদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে পিবিআইয়ের একটি দল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিসবাহ উদ্দিন ও সজিব আহমদের নেতৃত্বে আখালিয়াস্থ এলাকার নবাবী মসজিদের গোরস্থান থেকে রায়হানের মরদেহ উত্তোলন করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে মরদেহ নেয়া হয়।

শনিবার (১০ অক্টোবর) মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে পরিবার। সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতনের সময় এক পুলিশ সদস্যের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের মরদেহ শনাক্ত করেন।

jagonews24

ঘটনার শুরুতে ওই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারী সন্দেহে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করেন। কিন্তু গণপিটুনির স্থান হিসেবে যে কাষ্টঘর এলাকার কথা বলেছিল পুলিশ, সেখানে সিটি কর্পোরেশনের বসানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই সময়ে এমন কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

রোববার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে পুলিশ সদস্যরা নির্যাতন করে তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ এনে মামলা করেন।

বিষয়টি তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে- রোববার ভোররাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আনা হয়। সেখানে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মারা যান রায়হান।

নিহত রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারীপাড়া এলাকার তৎকালীন বিডিআরের নায়েক মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবীবাজার এলাকার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন। নিহারিপাড়ায় স্ত্রী, ছয় মাস বয়সী মেয়ে, মা ও চাচাকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

এ ঘটনায় রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

মঙ্গলবার বিকেলে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) স্থানান্তর করা হয়।

ছামির মাহমুদ/এএম/এমকেএইচ