প্রজন্ম যায়, উন্নতি হয় না মজিদদের
কখনো হাতে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে টুকরি ভর্তি করে অন্যত্র নিয়ে যান আবার কখনো পায়ে গামছা পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে গাছে ওঠেন। বিভিন্ন ফলদ গাছ লাগানো, ফলমূল পাড়া ও গাছ কাটার কাজও করেন দিনমজুর আবদুল মজিদ হাওলাদার। প্রতিদিন কাজ করে যে আয় করেন তা দিয়ে ১০ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। করোনা মহামারিতে সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তবুও থেমে নেই মজিদের জীবন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার খলিসাখালী ইউনিয়নের খলিসাখালী গ্রামের কদম আলী হাওলাদার পেশায় একজন দুধ বিক্রেতা ছিলেন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তান মো. ইয়াকুব আলী হাওলাদার পৈতৃক সূত্রে দুধ বিক্রি শুরু করেন। পরে মো. ইয়াকুব আলী হাওলাদার গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা আবুল ফরাজির মেয়ে আছিয়া বেগমকে বিয়ে করেন।
১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ওই দম্পতির ঘর আলো করে আসে একমাত্র সন্তান আবদুল মজিদ হাওলাদার। ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাসিন্দা মেনাজ হাওলাদারের মেয়ে জরিনা বেগমের সঙ্গে মজিদের বিয়ে হয়। মজিদ-জরিনার ঘরে রয়েছে চার ছেলে ও এক মেয়ে।
দিনমজুর আবদুল মজিদ হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন গাছ কাটি ও মাটি কাটি। মানুষের বদলা কাজ করি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এতে কোনো রকম সংসার চলে। বাবার রেখে যাওয়া ঘর ছাড়া কোনো ধন সম্পদ নেই। বাবা-দাদা দিনমজুরি করতেন। আমিও দিনমজুরের কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বড় ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মেজ ছেলে হুন্ডার গ্যারেজে কাজ করে। অন্য দুই ছেলে ছোট। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তখন কাজ বন্ধ থাকে। আবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকেও কাজ বন্ধ ছিল। এতে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। এখন মানুষ আমাগো কাজে ডাকে। করোনার শুরুর দিকে আমাগো কেউ ডাকে নাই।
‘চেয়ারম্যানের কাছে বহুবার গিয়ে বসে থেকে এক মাস হইছে একটা কার্ড পাইছি। এর আগে কী যে কষ্ট গেছে বুঝাইতে পারমু না। আমরা গরিব মানুষ কাজ করলে ঘরে খাবার জোটবে, না করলে নাই। খাবারের জন্য বাচ্চারা যখন কাঁদছে তখন নিজে নদীর ধারে গিয়া লুকিয়ে কান্না করছি। কার ধারে হাত পাতমু? কেউত এই গরিবের কথা শোনবে না।’
দিনমজুর মজিদের স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, তার স্বামী অত্যন্ত ভালো মানুষ। বুড়া বয়সেও সে প্রচুর ভালোবাসে। পরের জনমেও মজিদ যেন তার স্বামী হয়, আল্লাহর কাছে সে দোয়াই করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মজিদ ও তার বাব-দাদা সবাই দিনমজুরের কাজ করেছে। ওদের কোনো ধনসম্পদ নেই। মজিদের জীবনেও কোনো উন্নতি নেই। মজিদের ছেলেরাও দিনমজুরের কাজ করে। তাদের জীবনে কোনো উন্নতি আর হয় না।
খলিসাখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির খাঁ বলেন, দিনমজুর মজিদকে চালের কার্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো সহায়তা এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সে পাবে।
এফএ/এমএস