নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর সাগরে ছুটছে জেলেরা
অবশেষে সুন্দরবনের নৌপথ ব্যবহার ও সাগড়পাড়ের দুবলায় চলতি মৌসুমে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগ পেয়েছেন জেলেরা।
বনের অভ্যন্তরের নৌপথ দিয়ে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা বনবিভাগ প্রত্যহার করে নেয়ায় হাজার হাজার জেলে এখন সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছেন। বিড়ম্বনার শিকার জেলেরা শেষ মেষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন বনবিভাগের গৃহিত এ সিদ্ধান্তে।
তাদের পরিবার পরিজনেও দেখো দিয়েছে ফের আশার আলো। জেলেরা জানিয়েছে, প্রকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে তারা এ বছর পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। তবে সমুদ্র উপকূলে জলদস্যুদের তৎপরতার বিষয়টি নিয়ে বেশ শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জেলে ও ব্যবসায়ী সূত্রগুলো জানায়, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই তারা সমুদ্র যাত্রার প্রস্তুতি নেয়। কিন্ত পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই বনবিভাগ সুন্দরবনের নৌপথ ব্যবহার ও চলাচলে হঠাৎ করেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যে কারণে জেলেরা নির্ধারিত সময় দুবলার চরাঞ্চালে যেতে পারেনি। আর ভিন্ন পথ অবলম্বন করে যারা ইতোমধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল তারাও উঠতে পারেন সাগরপাড়ে। এ নিয়ে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে আটকে পড়ে হাজার হাজার জেলে। জাল-নৌকা ও শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সরঞ্জামাদি নিয়ে ভাসতে থাকে নদী ও দ্বীপাঞ্চালের চরে। এ নিয়ে গত বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। শেষ পর্যন্ত জেলে ও বনবিভাগের রশিটানাটানির এক পর্যায়ে সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় শীত মৌসুমে গভীর সাগর ও সাগর উপকূল থেকে মাছ আহরণে বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সেই সঙ্গে দুবলারচরে শুটকি প্রক্রিয়া করতে সীমিতভাবে শীতকালীন অস্থায়ী জেলে পল্লী বসাতে অনুমতি মিলেছে।
বুধবার প্রধান বন সংরক্ষক ঢাকা থেকে খুলনার বন সংরক্ষককে দেয়া এক পত্রে এ অনুমতির কথা জানান।
বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের সংরক্ষক ড. সুনীল কুমার কুন্ডু এ খবর নিশ্চিত করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় আজ-কালের মধ্যে হাজার হাজার জেলে তাদের ট্রলার ও নৌকা নিয়ে পশুর ও শিপসা নদী দিয়ে সমুদ্র যাত্রার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
বঙ্গোপসাগরের আলোর কোলের শুটকি ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ বুলবুল জানান, প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দুবলার চরে এ শুটকির পল্লী বসলেও এ বছর তা বৈধভাবে এক মাস পরে শুরু হচ্ছে। এতে করে জেলে ও মৎস্যজীবীদের এক মাস মাছ ধরা থেকে পিছিয়ে পড়ায় মোটা অংকের টাকা লোকসান গোনার আশঙ্কা রয়েছে। তবে দেরিতে হলেও অনুমতি দেয়ায় জেলেরা খুশী।
এ বিষয়ে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান (অবঃ) মেজর জিয়া উদ্দিন জানান, বুধবার এ অনুমতি মেলায় দুবলার চর নিয়ে বিদ্যমান অচল অবস্থার অবসান ঘটলো। এতে করে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার জেলে মহাজন ও তাদের পরিবারের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের সংরক্ষক ড. সুনীল কুমার কুন্ডু জানান, মাছ আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়ায় অনুমতি মিললেও এ ব্যাপারে বন বিভাগ কঠোর নজরদারী বজায় রাখবে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএএস/পিআর