কন্যা সন্তান প্রসব করলেন পাগলি, কোলে তুলে নিলেন ডিসি
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা বাজারে ঘোরাঘুরি করতেন এক মানসিক প্রতিবন্ধী (পাগলি) তরুণী। তিনি নিজের নাম-পরিচয় কিছুই বলতে পারেন না। এক সময় অসুস্থ অবস্থায় উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামে দিনমজুর পরিবারে ঠাঁই হয় ওই তরুণীর। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক জানান মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা।
শুক্রবার (২ অক্টবার) বিকেলে মানসিক প্রতিবন্ধী ওই তরুণী কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। এরপর বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে প্রশ্ন ওঠে এই সন্তানের বাবা কে? কী হবে তার বংশ পরিচয়? কে নেবে তার দায়ভার?
এমন সময় রাতে হাসপাতালে ছুটে আসেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সরোজ কুমার নাথ। তিনি অজ্ঞাত ওই তরুণীর নবজাতককে কোলে তুলে নেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি অবগত হয়েছে। এ বিষয়টি দেখভাল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে নবজাতক ও তার মায়ের সকল চিকিৎসার খরচ জেলা প্রশাসন বহন করবে।
এর আগে সকালে মানসিক প্রতিবন্ধী ওই তরুণীর প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে আশ্রয় দেয়া উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের দিনমজুর আমজাদ আলী-ছাকিরন নেছা দম্পতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর বিকেল ৪টার দিকে কন্যা সন্তান প্রসব করেন মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী।
দিনমজুর আমজাদ আলী জানান, আনুমানিক ২২ বছরের পরিচয়হীন এক মানসিক প্রতিবন্ধি তরুণী উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন। কখনও ময়লা কাপড়-চোপড় শরীরে জড়িয়ে আবার কখনও অর্ধনগ্ন অবস্থায় থেকে মুখে বিড় বিড় করে কী যেন বলতেন। কেউ কিছু বললে কখনও তেড়ে আসতেন। আবার কখনও ঠান্ডা মেজাজে থাকতেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় পড়েছিলেন ওই তরুণী।
তিনি বলেন, অসহায় অসুস্থ মানুষটি তো কারও না কারও সন্তান বা বোন। এটা ভেবে বিবেকের তাড়নায় ওই গ্রামের আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন মিলে তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখেই বলেন- মেয়েটি অন্তঃসত্তা। এখন তার পর্যাপ্ত খাওয়া-দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার।
আমজাদ আলী জানান, হাসপাতালে ওই তরুণীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হলে বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতেই তিনি পাগলামি শুরু করেন। অস্থির করে তোলেন গোটা হাসপাতাল। বাধ্য হয়ে গাড়ি ভাড়া করে আবার তাকে নিয়ে এলাকায় যান। তাকে আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও অস্থিরতার কারণে সবাই এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, এমন অবস্থায় অসুস্থ পাগলিকে বিবেকের তাড়নায় আর বাজারে ছেড়ে দিতে পারিনি। তার গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাই।
দিনমজুর আমজাদের স্ত্রী ছাকিরন নেছা জানান, তাদের অভাবের সংসার হলেও নিজের সংসারের সদস্যের মত করে তাকে সেবা যত্ন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আফসানা পারভীন জানান, সন্তান প্রসবের সময় তিনি স্বাভাবিক না থাকায় অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়েছে। তবে মা ও নবজাতক দুজনই সুস্থ আছেন।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/আরএআর/এমএস