ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কাঁদছে মুকুলের মা-বাবা, কাঁদছে গ্রামবাসী

প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ০৪ নভেম্বর ২০১৫

ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন মা মুর্শিদা বেগম। নাওয়া-খাওয়া নেই। থেকে থেকে বিলাপ করছেন। কখনো মূর্ছা যাচ্ছেন। তাকে সামাল দিতে ছুটে এসেছেন গ্রামের নারী-পুরুষরা। বাবা শহীদুল ইসলাম জমিতেই ছিলেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাকে তার শ্যালক ছেলে হারানোর দুঃসংবাদটি দেন।

কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। বিশ্বাসই বা করবেন কেমন করে। কারণ সোমবার দুপুরেইতো ছেলে মুকুল মুঠোফোনে তার সঙ্গে সংসারের বিভিন্ন বিষয়ে, নিজের শরীর এমনকি তার চাকরির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সেই কথা বলার ৩০ ঘণ্টা পর সেই মুকুল আর নেই এমন কথা কে বিশ্বাস করবে!

এভাবেই দুঃসংবাদ পাবার বর্ণনা দিলেন আশুলিয়ায় দুর্বৃত্তদের এলোপাথারি হামলায় নিহত শিল্প পুলিশ মুকুল হোসেনের ছোট ভাই জিসান বাবু। শুধু মা বাবাই নয়, মুকুলের মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। বাবা শহীদুলের বুক ফাটা আর্তনাদে পুরো গ্রামের মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।  

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল পূর্ব পাড়া গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলামের বড় ছেলে মুকুল হোসেন। বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে অনার্স বিষয়ে লেখাপড়া করছিলেন। পাঁচ বছর আগে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন মুকুল। প্রথমে রাজশাহীতে কর্তব্য পালন করেন। দেড় বছর আগে বদলি হয়ে আসেন ঢাকার আশুলিয়া থানার বাড়ইপাড়া পুলিশ চেকপোস্টে। কে জানে এই বাড়ই পাড়াতেই তার মৃত্যুফাঁদ পাতা আছে।

মুকুলের বাবা শহীদুল ইসলাম কান্না জড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় ছেলের সঙ্গে। তখন মুকুল জানায়, এখানে তার ভালো লাগছে না। এলাকাটাও ভালো না। প্রতিদিন খুন-খারাপি লেগেই আছে। তার ভয় করছে। এখানে চাকরির বয়স দেড় বছর হয়েছে। এখন বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যাবে। কিন্তু ছেলেটা আর যেতে পারলো না।  

মুকুলের নানা আবুল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, মুকুলের বাবা শহীদুল কৃষক। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে মুকুল ছিল সবার বড়। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই ছিল মুকুল। বাবার সামান্য কিছু জমিজমা রয়েছে। তবে মুকুলের আয়ে তাদের সংসার এবং তিন ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ চলতো।

মুকুলের মা মুর্শিদা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ঈদে আসতে পারেনি বলে পূজার ছুটিতে সাত দিনের জন্য বাড়ি আসছিল মোর ছোল। সেই ছোলডাক মারি ফেলালো। আমরা এর বিচার চাই।

ছোট ভাই জিসান বাবু (১৭) রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছোট বোন সম্পা খাতুন (১৫) স্থানীয় রহবল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে এবং মিষ্টি খাতুন (১২) রহবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির সমাপণী পরীক্ষার্থী।  

শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্রতিবেশি নবাব আলী জাগো নিউজকে বলেন, মুকুলের স্বপ্ন ছিল অর্নাস পড়া শেষে পদোন্নতি নিয়ে পুলিশের্উপ-পরিদর্শক (এসআই) হবেন। ঢাকায় একটি সুন্দর বাড়ি করবেন। সেখানে মা-বাবা ভাইবোনদের নিয়ে আসবেন।

মুকুলের ছোট ভাই জিসান বাবু জাগো নিউজকে জানান, বছর দেড়েক আগে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পূর্বপাড়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে কামরুন্নাহার শিখার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ভাইয়ার। এরপর দাম্পত্য কলহে প্রায় সাত মাস আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়।  

জিসান আরও জানায়, আমাদের যেটুকু জমি আছে তাও বন্ধক রয়েছে। আমাদের চার ভাইবোনের লেখাপড়ার জন্য অনেক আগেই জমিগুলো বন্ধক রাখা হয়। ভাইয়ার ইচ্ছা ছিল জমিগুলো ছাড়িয়ে নেয়ার।  

শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, মুকুল অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। এলাকায় তার কোনো বদনাম নেই। কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ নেই। মানুষের উপকারে পাশে দাঁড়ানো ছিল তার স্বভাব। গ্রামে ছোট থেকে বড় হয়েছে কেউ তাকে খারাপ বলতে পারবে না। বড় হবার স্বপ্ন ছিল তার। এজন্য চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল সে। তার মৃত্যুতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আহসান হাবীব জাগো নিউজকে জানান, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত মুকুলের মরদেহ মর্গে ছিল। আশুলিয়ার থানা পুলিশ তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেবে।

লিমন বাসার/এমজেড/পিআর