৫ হাজার টাকার জন্য কলেজে ভর্তি না হয়ে ফিরে এলো রনি
দেশসেরা রাজশাহী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রনির। ভর্তি হতে এসে অর্থাভাবে রোববার কলেজ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে তাকে।
রবিউল ইসলাম রনি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের অনাথ শিমলা এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরেই তার বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। স্বামী-সংসার নিয়ে চিন্তায় ভারসাম্য হারিয়েছেন মা রহিমা বিবিও।
নানান টানাপোড়েনের ভেতরেই উপজেলার কালীগ্রাম দোডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রনি এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় আবেদন করে রাজশাহী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বিবেচিত হয়েছে রনি।
রোববার থেকে শুরু হয়েছে ভর্তি প্রক্রিয়া। খবর পেয়ে প্রতিবেশী সোহেল রানার সহায়তায় রোববার রাজশাহী পৌঁছায় রনি। ভর্তির জন্য কাগজপত্র নিয়ে কলেজেও যায়। কিন্তু ভর্তির জন্য নির্ধারিত খরচ জোগাড় না হওয়ায় ফিরে আসতে হয় খালি হাতে।
রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে কথা হয় অসহায় রবিউল ইসলাম রনির সঙ্গে। সে জানায়, বড় দুই বোনের পর একমাত্র ভাই সে। বিয়ের পর দুই বোন স্বামীর সংসারে। বাড়িতে কেবল বাবা-মা আর সে।
বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথেঘাটে ঘুরে বেড়ান। সংসার এবং একমাত্র ছেলের পড়ালেখা নিয়ে চিন্তা করতে করতে একসময় তার মাও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এতদিন চাচাদের সহায়তায় তাদের সংসার চলছে। চাচা এবং শিক্ষকরা মিলে তার পড়াশোনার খরচ দিয়েছেন। সবার সহায়তা নিয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে সে। এখন বাধা উচ্চ মাধ্যমিক।
মাত্র ৫ হাজার টাকার জন্য আটকে আছে তার কলেজে ভর্তি। কোনো রকমে ভর্তি হতে পারলেও দুশ্চিন্তায় রাজশাহীতে থাকা-খাওয়া এবং পড়ালেখার খরচ নিয়ে। একটু সহায়তা পেলে পড়ালেখা শেষ করে মানুষের মতো মানুষ হতে চায় রনি। একইসঙ্গে অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসাসহ সংসারের হাল ধরতে চায়।
রনির চাচা সুলতান আলী জানান, তাদের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। বসতভিটা ছাড়া কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। আয়ের আলাদা কোনো উৎসও নেই। তবুও যেটুকু পেরেছেন সহায়তা করেছেন।
তিনি বলেন, এতদিন এক ভাইয়ের বাড়িতে রেখে তার পড়ালেখা চালিয়ে নিয়েছি আমরা। কিন্তু এখন চাইলেও আমরা আর তাকে সহায়তা করতে পারছি না।
এ বিষয়ে কালীগ্রাম দোডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছার রহমান বলেন, রবিউল ইসলাম অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি পেয়েছে রনি। তার পারিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা অনেক সময় তার পড়ালেখায় সাহায্য করেছি। শুনেছি সে রাজশাহী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটি খুবই আনন্দের সংবাদ। তার পড়ালেখার পথ সুগম করতে সবার সহায়তা প্রয়োজন।
এফএ/জেআইএম