একসঙ্গে পরিবারের ৫ জনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তামান্না
৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ঝিলমিল আক্তার মরিয়মকে বাড়িতে রেখে গত ৫ আগস্ট ঢাকায় বড় ভাই আরিফের সঙ্গে একটি গার্মেন্টসে চাকরিতে যোগ দেন তারেক। ২০ আগস্ট নিজ বাড়িতেই তার স্ত্রী কন্যা সন্তান প্রসব করেন। মেয়ের নাম রাখেন উম্মে ফাতিমা।
বড় ভাই আরিফের স্ত্রী তামান্না আক্তারও অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বিয়ের ১০ বছর পর গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার উত্তরার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তামান্না একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে শিশুটি মারা যায়।
তামান্নাকে হাসপাতালে রেখে পরিবারের পাঁচজনকে নিয়ে আরিফ বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে শিশুটির মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাউকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু জমদূত বসেছিল বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আটিপাড়া রাস্তায় মাথায়। সেখানে তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুমড়েমুচড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। এ সময় বরিশাল থেকে ঢাকাগামী একটি কাভার্ডভ্যান এসে অ্যাম্বুলেন্সটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের পাঁচজন ও অ্যাম্বুলেন্স চালক নিহত হন।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন নিহত আরিফের জ্ঞাতি নানা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুল মান্নান।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- ঝালকাঠির সদর উপজেলার বাউকাঠি গ্রামের মৃত সিরাজের ছেলে আরিফ (৩৫), আরিফের মা কহিনুর বেগম (৬৫), বোন সিএমএইচের নার্স শিউলি বেগম (৩০), ভাই তারেক (২৫), শ্যালক নজরুল ইসলাম (৩০) ও অ্যাম্বুলেন্স চালক কুমিল্লার আলমগীর হোসেন (৩৫)।
এদিকে নিহত আরিফের স্ত্রী তামান্নাকে সকালে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়েছে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। একসঙ্গে পাঁচজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহগুলো হস্তান্তরের পর ভোর ৪টায় বাড়িতে আনা হয়। ঝালকাঠির বাউকাঠি গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে কহিনুর, আরিফ, তারেক ও নবজাতক শিশু সন্তানকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। শিউলি বেগমকে সেনাবাহিনীর বিভাগীয় প্রক্রিয়া শেষে শ্বশুরবাড়িতে হস্তান্তর করা হবে। সদর উপজেলার নৈয়ারী গ্রামে নজরুলকে তার নিজ বাড়িতে ও অ্যাম্বুলেন্স চালক আলমগীর হোসেনকে কুমিল্লার নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
নিহত তারেকের স্ত্রী ঝিলমিল আক্তার মরিয়ম বলেন, ২০ আগস্ট মেয়ের জন্ম হলেও সে (তারেক) ছুটি না পাওয়ায় আসতে পারেনি। ইমোতে তাকে মেয়ের ছবি দেখিয়েছি। সে গতকাল সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে ফোন দিয়ে বলেছিলো- বাড়িতে আসতেছি। মেয়েকে আগেই খাইয়ে রাইখো। কিছুক্ষণ পরপর কথা বলেছি। তার ইচ্ছে ছিল মেয়েকে প্রাণ ভরে আদর করার। কিন্তু বিকেল ৫টার পর আর কথা হয়নি। পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তছলিম হোসেন জানান, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও এক শিশু সন্তান রয়েছে। এখন পরিবারটিতে কান্না করার মতোও কেউ রইলো না।
আতিক রহমান/আরএআর/জেআইএম