ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দুই ছেলে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে পারুল বিবির

শাহাদাত হোসেন | নারায়ণগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি করে মায়ের কষ্ট দূর করার স্বপ্ন ছিল সাব্বির ও জুবায়েরের। কিন্তু তার আগেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছে দুই ভাই। মায়ের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। এক বিস্ফোরণে সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত কলেজ ছাত্র দুই ভাইয়ের মা পারুল বিবির সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।

পারুল বিবি বলেন, তিন ছেলে নামাজ পড়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে গিয়েছিল। এক ছেলে ঘরে ফিরলেও দুই ছেলে আর ফিরে এলো না। তার তিন ছেলের মধ্যে মো. সাব্বির (২১) নারায়ণগঞ্জ সরকারি কলেজে বিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিল, জুবায়ের (১৮) নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল আর ইয়াছিন (৯) হাজীগঞ্জে মাদরাসায় মক্তবে লেখাপড়া করে।

শুক্রবার এশার নামাজ পড়ার জন্য তিন ভাই তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে যায়। ছোট ছেলে ইয়াছিন ফরজ নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার দুই মিনিট পরই বিস্ফোরণের সংবাদ পায়। সে দৌড়ে বাসায় এসে বিপদের কথা মাকে জানায়।

সেদিন ইয়াছিন মাকে বলেছিল, ‘ভাইয়াদের বিপদ। তাদের বাঁচাও।’ কিন্তু ইয়াছিনের কথা আমলে নেননি মা পারুল বিবি। তিনি ভেবেছিলেন ছেলেরা মসজিদে গেছে, তাদের কী বিপদ হবে। পরে এলাকায় মানুষের কান্না শুনে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের সামনে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা জানতে পারেন।

পারুল বিবি বলেন, দুই ছেলেকে দেখার জন্য নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে গিয়ে তাদের খুঁজে পাইনি। খবর পাইলাম যারা দগ্ধ হয়েছে তাদের সবাইকে ঢাকায় নিয়ে গেছে। রাতেই ঢাকায় ছুটে গেলাম। কিন্তু ঢাকায় গিয়েও ছেলেদের দেখতে পারিনি। সাব্বির ও জুবায়েরের মৃত্যুর সংবাদ পেলেও তাদের লাশ দেখতে পাইনি।

jagonews24

পারুল বিবি বলেন, ছেলেদের বাবা নুরুউদ্দিন থেকেও নাই। সে আলাদা বসবাস করে। তিন ছেলেকে মানুষ করতে যুদ্ধে নামতে হয়। ছেলেদের লেখাপড়া ও নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। যার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ও শিশুদের আরবি পড়িয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার খরচ ও ছেলেদের লেখাপড়া করিয়েছি। এজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি দুই ভাই কয়েকটা টিউশনি করে সংসারে সাহায্য করত।

তিনি বিলাপ করেন বলেন, ‘তারা সবসময় তাদের মায়ের দুঃখ দূর করতে চাইত। মাকে সান্ত্বনা দিত। বলত তারা ভালো চাকরি করে মাকে নিয়ে সোনার সংসার গড়ে তুলবে।’

এমনটাই স্বপ্ন ছিলো সাব্বির ও জুবায়েরের। এখন পারুল বিবির কষ্ট কে দূর করবে। এখন কাঁদতে চাইলেও আর কান্না আসে না পারুল বিবির। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তার।

পারুল বিবি জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলে দুইটাই ভদ্র প্রকৃতির ছিলো। রাস্তায় সব সময় মাটির দিকে তাকিয়ে চলাচল করত। ঈদের সময় ছেলের বাবা, মামাসহ আত্মীয়স্বজন বকশিশ দিলে সাব্বির ও জুবায়ের সেই টাকা খরচ না করে সংসারে খরচের জন্য আমার হাতে তুলে দিত। পকেটে ২০ টাকা থাকলেও দোকান থেকে লবণ কিনে আনত। আমার সোনার দুই ছেলে বেঁচে নাই এটা ভাবতেও পারছি না। তিন ছেলেকে নিয়ে একটি রুমে কষ্ট করে বসবাস করতাম। ছেলে দুইজন বড় হওয়ায় দুই মাস আগে দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাস শুরু করি। কিন্তু বিস্ফোরণে সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে।

এফএ/জেআইএম