আগস্টে দিনাজপুরে করোনার সর্বোচ্চ হানা
দিনাজপুরে আগস্টের শুরুতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলেও শেষে এসে তা আবার কমতে শুরু করে। জেলায় করোনা শনাক্তের সাড়ে ৪ মাসে ৩ হাজার ৭৭ জন রোগীর মধ্যে শুধুমাত্র আগস্ট মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৭৪ জন। আর ৬৩ জনের মধ্যে ২৭ জনই মারা গেছে এই মাসে। এ মাসে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ছিল ১৭ আগস্ট ৯৪ জন। সর্বোচ্চ ৪ জন মৃত্যুবরণ করে ২৯ আগস্ট।
এ মাসে গড়ে প্রতিদিন ৪৪ দশমিক ৩২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই সংক্রমণ রোধ করতে দিনাজপুরে প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে শতভাগ বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের বিশেষ কার্যক্রম।
অপরদিকে বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দিনাজপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি ও স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন করে দুটি ইউনিট চালু ও দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের ৫০ শয্যার করোনা ইউনিটকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দিনাজপুরে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। কোরবানির ঈদের আগে দিনাজপুরে গড়ে প্রতিদিন ২১ জন আক্রন্ত হলেও ঈদের পর থেকে গড়ে প্রতিদিন ৪৪ দশমিক ৩২ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা শহরসহ উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন প্রশাসন। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য মাঠে নেমেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। চলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। কিন্তু এরপরও মাস্ক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব নেই অধিকাংশ মানুষের। হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪০ ভাগ মানুষই মাস্ক ব্যবহার করছেন না বা করলেও সঠিকভাবে সেটি ব্যবহার হচ্ছে না।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৭ আগস্ট সকাল থেকে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের কার্যক্রমে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ও উপজেলা পর্যায়ে অভিযান শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সোমাবার দুপুরে শহরের বাহাদুরবাজার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে আসা প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। আর প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলেও তারা সঠিকভাবে করছেন না।
মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, মানুষ যাতে করোনায় সংক্রমিত না হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মাস্ক ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শতভাগ মাস্ক ব্যবহারের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাতে করে সকল মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে। আমরা আশা করছি আগামী দিনগুলোতে সচেতনতার মাধ্যমে সকলে মাস্ক ব্যবহার করবে। আর শতভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলে করোনার যে সংক্রমণ তা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র মতে, এ যাবত দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৭৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৩ জন। এছাড়াও আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫৭৯ জন এবং বর্তমানে রোগীর সংখ্যা ৪৩৫ জন।
সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, দিনাজপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৪ এপ্রিল। এরপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও ঈদের পর করোনার সংক্রমণ আশংকাজনকভাবে বেড়ে যায়। পরে সচেতনতামূলক ব্যাপক কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় বর্তমানে রোগী কমতে শুরু করেছে।
এমদাদুল হক মিলন/এফএ/জেআইএম