এমপির ভাইকে কুপিয়ে হত্যা, সেই বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে মামলা
কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশার ফুফাতো ভাই হাসিনুর রহমানকে (৫২) প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় একই এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান বয়াতি ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। শনিবার রাত ১২টার পর নিহতের স্বজন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জুব্বার আলী বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় এ মামলা করেন। ঘটনার পরপরই মজিবর বয়াতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে মজিবর বয়াতির ছেলে জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নিহত হাসিনুর রহমান কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশার ফুফাতো ভাই ও দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছেলের হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে মামলা মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয়ার বদলা নিতে হাসিনুর রহমানকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন মজিবর রহমান বয়াতি। হত্যার পর পালিয়ে না গিয়ে পুলিশের হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিতে নিজ গৃহে অবস্থান করছিলেন তিনি।
শনিবার (২৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় জব্বার নামে আরেকজন আহত হন। হাসিনুরকে কুপিয়ে হত্যার পর মজিবর রহমান বয়াতি প্রকাশ্যে স্থানীয় শত শত লোকের সামনে চিৎকার করে বলতে থাকেন, সন্তান হত্যার বদলা নিলাম। তবে পুলিশ সরাসরি সন্তান হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে মামলা মীমাংসা করার বদলার বিষয়টি স্বীকার না করে বলছে- পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মজিবর রহমান বয়াতি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপি আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশা বলেন, হাসিনুরকে হত্যা সাধারণ হত্যাকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা নয়। এই হত্যা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পরিকল্পিত অংশ। আমার পরিবার ও আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, মজিবর বয়াতির ছেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অনেকে হাসিনুর হত্যার যোগসূত্র খুঁজছেন। মজিবর বয়াতির ছেলে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না হাসিনুর। কাজেই হাসিনুরের ওপর মজিবরের এতো ক্ষোভ ও আক্রোশ থাকার কথা নয়। এটি নিছক সাধারণ ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পনার অংশ।
দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিশিকান্ত বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মজিবর বয়াতিকে রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালের ঈদুল আজহার দিন বিকেল বেলায় পদ্মা নদীর পাড়ে আবেদের ঘাট এলাকায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে মজিবর রহমান বয়াতির ছেলে স্থানীয় পিকেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আনোয়ার (১৫) কথা কাটাকাটির জের ধরে ছুরিকাঘাতে খুন হয়। এ ঘটনায় নিহত আনোয়ারের বাবা মজিবর কয়েকজনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার আসামি এবং আসামিদের পরিবারের সদস্যরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন। তদন্তের কয়েক মাস পর একই বছর দৌলতপুর থানা পুলিশ স্কুলছাত্র আনোয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র এবং স্থানীয়রা জানান, মামলার বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের হওয়ায় এমপির প্রতিনিধি হিসেবে হাসিনুর রহমান সমঝোতা করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। আপস-মীমাংসার জন্য কয়েক দফায় তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেন। সমঝোতার জন্য মজিবর রহমান বয়াতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন হাসিনুর। এ কারণে তার ওপর চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন মজিবর।
হাসিনুর প্রতিদিন সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বের হতেন। বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন মজিবর। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিলেন তিনি। সুযোগ বুঝে শনিবার সকালে মজিবর একাই হাসিনুরকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়েই ঢাকা থেকে এলাকায় ছুটে আসেন এমপি সারওয়ার জাহান বাদশা। শুধু পূর্বশত্রুতার কারণে নয় এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কারও ইন্ধন রয়েছে কি-না বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।
আল-মামুন সাগর/এএম/এমএস