ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আগে ছিলাম আয়ের উৎস, এখন আমি বিপদ

মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী | পটুয়াখালী | প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ১৪ আগস্ট ২০২০

‘আগে বাসের মালিক বলতো আমার আয়ের উৎস এসেছে। আপ্যায়ন কর। এখন অফিসে গেলে আমার সঙ্গে কথাও বলে না। অথবা আমার কথা বলার কোনো সুযোগই রাখে না। এখন বলে, জোলা (বিপদ) আসছে। আমাকে দেখলে সাইড কেটে যায়। এ যন্ত্রণা বলার মতো না।’ কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়া বাসচালক মো. মনিরুল ইসলাম খান (৬০)।

গাড়ির চাকা ঘোরাতে না পারায় মনিরুলের জীবনের চাকাও এখন থেমে গেছে। পাঁচ সদস্যের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি যখন অচল তখন সংসারে চুলা জ্বালানোটাও যেন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, আমতলীর উত্তর টিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা মৃত আবদুল হাসেম আলী খানের ছেলে মনিরুল। বাবার রেখে যাওয়া জায়গায় বসবাস করছেন তিনি। ১৬ বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দা আবুল ফরাজির মেয়ে মোছা. সিমা বেগমকে বিয়ে করেন। মনিরুল ও সিমার ঘর আলো করে আসে মীম (১২) ও মার্জিয়া (৬)। বর্তমানে মীম ৮ম শ্রেণিতে ও মার্জিয়া (৬) প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

বাসচালক মো. মনিরুল ইসলাম খান বলেন, ২৬ বছর পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির গাড়ি চালিয়েছি। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা লাইনে দাপটের সঙ্গে বাস চালাতাম। আমি গাড়িতে উঠলে সবাই একটু সাইড দিত। পটুয়াখালীর চারজন মালিকের বাস চালিয়ে আয় করেছি। সুস্থ থাকাকালীন প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা আয় ছিল। তখন টাকারে টাকা মনে করিনি। একটা টাকা জমাইনি। ২০০৭ সালে সিডরের পরদিন আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা ভেঙে যায়।

এ পর্যন্ত মোট চারটি অপারেশন করিয়েছি। প্রথম অপারেশনের দিন বাস মালিক সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা দেয়। এরপর ২ হাজার টাকা দেয়। শ্রমিক ইউনিয়নের কালাম মৃধা সাহেব কিছু আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। এরপর আর কোনো টাকা পাইনি। পা ভালো হওয়ার আশায় জমি-জমা যা ছিলো সব বিক্রি করে অপারেশন করিয়েছি কিন্তু ঠিক হয়নি। এখন আছে শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই এই বাড়িটা।

মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চলে কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার কারণে বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ। আর স্যার আমার অসহায় জীবনের কথা শুনে টাকা নেন না। কিন্তু খাতা-কলম কিনে দিতে হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, করোনা শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশ সড়ক ফেডারেশন ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে যে চাঁদা নিত সেখান থেকে মাঝে মধ্যে মাসিক কিছু টাকা পেতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল চাঁদা বন্ধ করেছে এখন আর সেই টাকা পাই না। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবন চলে। তাও সব সময় পারি না। অটো চালালে পা ভার হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি ছয় মাস অন্তর (ছয় হাজার টাকা) প্রতিবন্ধী ভাতা পান তিনি। তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে মোটামুটি চলে পাঁচজনের সংসার।

তিনি আরও বলেন, অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ৫ মাস আগে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে যাই। সেখানকার চিকিৎসক ডা. সেতু বলেছিলেন, পায়ে রড ঢোকানোর ৩ বছরেও যখন আপনার পা জয়েন্টে আসেনি আর আসবেও না। এটা কোনো কাজে আসবে না। জরুরি অপারেশন দরকার। অপারেশন করলে পা ভালো হতে পারে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যৌবন বয়সে কিসের জন্য টাকা জমালাম না? আমার টাকার দরকার নেই। শুধু অপারেশন করে পাটা সুস্থ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমার পরিবারের কথা ভেবে একটিবার অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমি বেঁচে যাব।

মনিরুলের স্ত্রী সিমা বেগম বলেন, আগে কত মানুষ তার (মনিরুল) খোঁজ নিত। কিন্তু ঘরে পড়ার পড় কেউ একদিন খোঁজ নেয় নাই। সবাই ভাবে হয়তো টাকা দেয়া লাগবে। আগে পটুয়াখালীতে ভাড়া বাসায় থাকতাম কিন্তু আয় না থাকায় এখন আমতলীতে চলে আসছি।

মনিরুলের মা আলেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার পোলার আগে সুখের সংসার আছিল। পুতে (ছেলে) যখন সুস্থ ছিল তখন কত লোক আমাগো খোঁজ নিছে এখন কেউ খোঁজ রাখে না। আমার নাতনিগুলা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না।

এফএ/এমএস