ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

প্রকাশিত: ১০:৩০ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

নরসিংদীর মাধবদীতে সরকারের উন্নয়ন কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে বাধা দেয়ায় প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা। এসময় পৌরসভায় নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলায় আহত হয় পৌরসভার আরো ৪/৫ জন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় প্রথম দফায় ও বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয় দফায় মাধবদী পৌরসভার ভেতরে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেধড়ক পিটুনিতে আহত হয় মাধবদী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

এ ঘটনায় পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বাদী হয়ে জুয়েলকে প্রধান আসামী করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত ও পৌরসভায় ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মাধবদী পৌর মেয়র ইলিয়াস। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মো. মনিরুজ্জামান জুয়েল মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। তিনি মাধবদী নূরালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজ্বী আলাউদ্দিন আজাদের ছেলে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, মাধবদী শহর উন্নয়নে পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে মাধবদী বিরামপুর সাংবাদিক সেলিমের বাড়ি হইতে ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত পাইপ ড্রেন স্থাপন ও রাস্তা পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় মাধবদী পৌরসভা। বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের অধিনে পৌরসভায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার নিযুক্ত হয় মেসার্স রত্মা অ্যান্ড রহমান ব্রাদার্স।

এর ঠিকাদারি প্রতিনিধি হিসেবে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয় মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও ঠিকাদার মো. মনিরুজ্জামান জুয়েল। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উন্নয়ন কাজে আওয়ামী লীগের এই নেতা নিম্নমানের ইটা ব্যবহার করে আসছেন। নিম্নমানের এসব সামগ্রী পুনরায় ব্যবহারের জন্য কাজের সাইডে সরবরাহ করা হয়।

বুধবার সকালে প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে নিম্নমানের ইটা ব্যবহারের প্রমাণ পায় সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম। তিনি এসব ইটা ব্যবহারে জুয়েলকে নিষেধসহ কাজ বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন জুয়েল। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পৌরসভার প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানের রুমে সহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে জুয়েলের কথা কাটাকাটি হয়।

এসময় শহর আওয়ামী লীগ নেতা সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করে। পরে দ্বিতীয় দফায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জুয়েলের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে মাধবদী পৌরসভায় হামলা চালায়। এসময় সহকারী প্রকৌশলীকে দ্বিতীয় দফায় পিটুনি দেয়। ভাঙচুর করা হয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র। খবর পেয়ে মাধবদী ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

লাঞ্ছিত সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম নরসিংদী জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে নিম্নমানের ইটা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে অবশিষ্ট উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য নিম্নমানের ইটা সরববাহ করা হয়। বিধায় কাজ বন্ধের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এতে জুয়েল আমার উপর চড়াও হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে পৌরসভায় হামলা চালায় এবং প্রকৌশলীর কক্ষে ভাঙচুর চালায়।

এ বিষয়ে মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, এটা নিছক ভুল বোঝাবুঝি। সহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। হামলা, ভাঙচুর ও মারপিটের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মাধবদী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সহকারী প্রকৌশলীদের নিয়ে উন্নয়ন কাজের বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছিল। এসময় নিম্নমানের ইটা ব্যবহারের বিষয়টি তোলা হয়। এসময় ঠিকাদার জুয়েল সঙ্গে সঙ্গে আমিনুল ইসলামের উপর চড়াও হয় এবং তাকে মারধর করেন।

পৌর মেয়র মো. ইলিয়াস বলেন, কাজের মান সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করাই প্রকৌশলীদের কাজ। কাজের মান খারাপ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার। ভোগান্তির শিকার হবে জনগণ। তাই মাধবদী পৌরসভায় শতভাগ কাজের মান বুঝে নিতে প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে উন্নয়ন কাজে ব্যবহারে বাধা দেয়ায় সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাবে বা প্রকৌশলীকে মারপিট করবে এটা সমীচীন নয়। আইনানুগভাবে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

সঞ্জিত সাহা/বিএ