ঘরবন্দি মানুষের মনে প্রশান্তির ছোঁয়া দিচ্ছে হাঁসাইগাড়ী বিল
কোরবানির ঈদকে ঘিরে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী বিলে জমে উঠেছে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। উন্মুক্ত এ স্থানে এসে এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছেন দর্শনার্থীরা। তবে হাঁসাইগাড়ী বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া এটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।
সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা হাঁসাইগাড়ী বিল। বিলের মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে পাকা রাস্তা। এ রাস্তাটি সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ও দুবলহাটি ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। বছরের অধিকাংশ সময় এ বিলে পানি থাকে। বর্ষা মৌসুমে বিলে পানি জমে যখন টইটুম্বুর হয় তখন এক অসাধারণ মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাতাসে পানির ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ এসে পাকা রাস্তায় ধরা দেয়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানুষ অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নওগাঁর পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় সেখানেও যেতে পারছে না। তাই উন্মুক্ত স্থানগুলোতে ভিড় বেড়েছে দর্শনার্থীদের। উন্মুক্ত এ স্থানে নির্মল হাওয়ায় এক অন্য রকম প্রশান্তি অনুভব করছেন তারা।
বাড়ির কাছে এমন পরিবেশ পেয়ে খুশি স্থানীয়রাও। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যে যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ ঈদের ছুটিতে আবার কেউ আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে এ বিলে আনন্দ উপভোগ করছেন। দর্শনার্থীদের আনাগোনায় সেখানে বসেছে এক গ্রামীণ মেলাও। বিলের মাঝে রাস্তা হওয়ায় কয়েক বছরে অনেকটা নিচু হয়ে গেছে। অনেক স্থানে ব্লকগুলো সরে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
সূর্যাস্তের সময় পশ্চিমাকাশের লাল আভা যখন পানিতে পড়ে তখন এক অন্যরকম দৃশ্যের অবতারণা হয়। কিছু সময়ের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সোলার ল্যাম্প পোস্টগুলো জ্বলে ওঠে। নির্দিষ্ট দূরুত্বে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্প পোস্টগুলো অন্ধকারে দেখলে মনে হবে যেন জোনাকীর আলো খেলা করছে।
শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষার্থী তাসনিম জামান বলেন, এই বিলের কথা অনেক শুনেছি। জেলার বাইরে থেকে পড়াশুনার কারণে এখানে আসা হয়ে ওঠেনি। এবার বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে এসেছি। নৌকায় চড়ে অনেক মজা করেছি। এক অসাধারণ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
সদর উপজেলার আরজি-নওগাঁ মহল্লার ফারজানা ইয়াসমিন ছোট বোন ও ভাইকে নিয়ে হাঁসাইগাড়ী বিলে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বলেন, চাকরির সুবাদে ঢাকাতেই বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয়। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। দীর্ঘদিন পর উন্মুক্ত স্থানে নির্মল বাতাসে যেন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, হাঁসাইগাড়ী বিলটি ঐতিহ্যবাহী। মানুষ একটু প্রশান্তি পাওয়ার জন্য এখানে ছুটে আসে। এখানে যদি রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয় তাহলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে আমি আশাবাদী। এর ফলে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আব্বাস আলী/এফএ/এমএস