ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জয়পুরহাটে টিআর-কাবিখার অর্থ লুটপাটের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৩ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

জয়পুরহাটের কালাইয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দুই দফায় টিআর ও কাবিখা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেয়া অর্থের পরিমাণ ১৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৮০ দশমিক ৮৫ টাকা এবং ১৬৪ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ৮৬ দশমিক ৭৯৬৮ মেট্রিক টন গম।

এর মধ্যে প্রকল্পের উদ্বোধনের আগেই চাল ও গমের ডিও লেটার (চাল ও গম সরবরাহের আদেশ) বিক্রয় করা হয়েছে। টিআর ও কাবিখার ৭৭টি প্রকল্পে বরাদ্দ আসা চাল ও গমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকল্প কমিটির সভাপতিদের কাছ থেকে টন প্রতি ৩ হাজার টাকা করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কালাই উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে টিআর-কাবিখা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৭৭টি প্রকল্পের বিপরীতে দুুই দফায় টাকা, চাল ও গম বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পের তালিকা ও কমিটি পিআইওর কার্যালয়ে দাখিলের পরপরই প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই ডিওতে স্বাক্ষর নেয়া হয়। টন প্রতি চাল মাত্র ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় এবং  টন প্রতি গম মাত্র ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকায় পিআইওর মনোনীত ডিও কেনাবেচার সিন্ডিকেট চক্রের কাছে প্রকল্প কমিটির সভাপতিদের বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। এ অভিযোগ একাধিক প্রকল্প কমিটির সভাপতি, এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের।

এছাড়াও টিআর-কাবিখা কর্মসূচি প্রকল্পে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাঝে খাদ্যশস্য বিতরণ দেখিয়ে বরাদ্দের সমুদয় অর্থ লুটপাট করার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আরও অভিযোগ আছে, প্রকল্প তালিকা তৈরি, প্রকল্প কমিটি দাখিল, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিসে বসেই সম্পন্ন করা হয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান অভিযোগ করে বলেন যে, সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের সব কাজ প্রকল্প কমিটির লোকদের ছাড়াই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নামমাত্র টাকা ব্যয়ে নিজে নিজেই করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, কাবিখার কর্মসূচির আওতায় উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের বহুতি গোলজারে উলুম মাদ্রাসা মাঠ ভরাট প্রকল্পে ৯ মেট্রিক টন চাল বারাদ্দ দেয়া হলেও মাদ্রাসা মাঠে কোনো প্রকার মাটি কাটা হয়নি। বরং দেখা গেছে, সবুজ ঘাস ভরা মাঠ। একই ইউনিয়নের মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় উন্নয়ন ও সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ৮ মেট্রিক টন চাল বারাদ্দ দেয়া হলেও উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে সৌর বিদ্যুতায়নে দায়সারা কিছু কাজ করা হয়েছে।

জিন্দারপুর ইউনিয়নের কাদিরপুর বহুমুখী ফাজিল মাদ্রাসা উন্নয়ন ও সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ৮ মেট্রিক টন চাল বারাদ্দ দেয়া হলেও ওই প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি। মাত্রাই ইউনিয়নের মাত্রাই মডেল কলেজের কমন রুমের বাথরুম ও মাঠ সংস্কার প্রকল্পে ৯ মেট্রিক টন চাল বারাদ্দ দেয়া হলেও কলেজ মাঠে কোনো মাটি কাটা হয়নি।

আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের করিমের জমির কাছ থেকে পূর্ব দিকে ছরোয়ারের জমি পর্যন্ত জলডারী সংস্কার প্রকল্পে ৯ মেট্রিক টন চাল বারাদ্দ দেয়া হলেও স্বল্প দূরত্বের এ প্রকল্পে দায়সারা কিছু কাজ করা হয়েছে।

পুনট ইউনিয়নের পুনট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং পুনট উচ্চ বিদ্যালয় উন্নয়ন ও সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে দুটি প্রতিষ্ঠানেই ১২ মেট্রিক টন করে চাল বারাদ্দ দেয়া হলেও পুনট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ৬টি লাইট, একটি ব্যাটারি ও একটি টেবিল ফ্যান দেয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ আব্দুল মান্নান। অপরদিকে, পুনট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়র রহমান বলেন, পুনট উচ্চ বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পে স্কুলের পুকুরের পাড়ে মাটি কাটা হয়েছে। আর সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিজ তদারকিতে ৪টি লাইট, একটি ব্যাটারি ও একটি ফ্যান দিয়েছেন।

মোলামগাড়ীহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট ও সোলার প্যানেল স্থাপন প্রকল্পে ১৪ মেট্রিক টন চাল বারাদ্দ দেয়া হলেও বিদ্যালয় মাঠ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়নি। অন্যদিকে, ওই বিদ্যালয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনে প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে কাজ না করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে দায়সারা কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান আব্দুল বারিক ও সভাপতি ইয়াকুব আলী।
 
কালাই পৌরসভার কালাই টেকনিক্যাল ও মহিলা বিএম কলেজে সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এভাবেই দুদফায় বরাদ্দ দেয়া টিআর-কাবিখা প্রকল্পের ছোট-বড় ৭৭টি প্রকল্পেই চলছে লুটপাটের মহা উৎসব।

কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি প্রকল্পগুলো দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে নীতিমালা অনুযায়ীই সব প্রকল্পের কাজ হয়েছে। সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্প বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি বা সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল কেনার জন্য প্রকল্পের সভাপতিদের আমি বলেছি, একথা সত্য। কিন্তু নিজ উদ্যোগে কোনো কাজ করিনি। এটা করার এখতিয়ারও আমার নেই।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হালদার বলেন, আমার যোগদানের আগেই যেহেতু ওই প্রকল্পের কাজ শেষে হয়ে গেছে। তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, আমার কাজ হলো টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া। আমি গম বা চালের টাকা খাব না, ধরবও না। কাজ বুঝে নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাজে ঘাপলা থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। আমি চাই শতভাগ কাজ।

তিনি আরও বলেন, পিআইও  টিআর-কাবিখা প্রকল্পে চাল ও গমের বরাদ্দ থেকে টন প্রতি টাকা খায়, তা জানলাম।  বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।  
 
রাশেদুজ্জামান/এমজেড/এমএস