ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রিকশা চালাচ্ছেন সৈকতের ফটোগ্রাফাররা

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০১:৪০ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২০

পর্যটন শিল্পকে চরম বেকায়দায় ফেলেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখ করার মতো রাজস্বের যোগান দেয়া পর্যটন শিল্প এখন নিজেই ধুঁকছে। চরম সঙ্কটে দিনাতিপাত করছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা পেশার মানুষ। সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ছবি তুলে সংসার চালানো ফটোগ্রাফাররাও এখন চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। করোনার কারণে মার্চের মধ্যবর্তী সময় থেকে ক্যামেরায় ক্লিক বন্ধ। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে সৈকতের ফটোগ্রাফারদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বৈধ-অবৈধ প্রায় সহস্রাধিক ফটোগ্রাফার রয়েছে। তবে নিয়মিত প্রায় ৫০০ ফটোগ্রাফার ছবি তুলে উপার্জন করতো। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তাদের আয় থাকতো ৩০০ টাকা। সে হিসেবে করোনাকালের গত চার মাসে শুধু ফটোগ্রাফাররা প্রায় দুই কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো ফটোগ্রাফার দিনে হাজার দেড়েক টাকাও আয় করতেন বলে প্রচার রয়েছে। পর্যটকদের ছবি তুলে যারা সংসার চালাতেন, অভাব-অনটনই এখন তাদের নিত্যসঙ্গী।

সৈকতে কর্মরত ফটোগ্রাফারদের মধ্যে হিমছড়ি থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্টে কর্মরত ফটোগ্রাফাররা সরকারিভাবে কিছু সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু ইনানী, রয়েল টিউলিপ ও পাটুয়ারটেক পয়েন্টে কর্মরত ফটোগ্রাফাররা কোনো সহায়তা পাননি। পর্যটক না থাকায় ক্যামেরার ক্লিক নেই, তাই আয়ও নেই। করোনায় দীর্ঘ চার মাস ধরে কর্মহীন অবস্থায় থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ফটোগ্রাফাররা। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্দিন কাটছে তাদের।

সৈকতের সিগাল পয়েন্ট ফটোগ্রাফারদের সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, কক্সবাজার সৈকতে বৈধ-অবৈধ প্রায় এক হাজার ফটোগ্রাফার রয়েছে। যারা পর্যটকদের ছবি তুলে স্মৃতি ধারণের ব্যবস্থা করিয়ে তাদের পরিবারের আহার যোগাতেন। কিন্তু করোনাকালে গত চার মাস সবাই বেকার। সীমিত পরিসরে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও পর্যটন শিল্প বন্ধ থাকায় এক প্রকার খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তাদের পরিবার।

কেউ কেউ সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেলেও অধিকাংশই কোনো সহায়তা পাননি অভিযোগ করে কাদের আরও বলেন, অভাবের কারণে অনেক ফটোগ্রাফার চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে এখন রিকশা চালাচ্ছেন। ঈদের আগে পর্যটন শিল্প থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পাশাপাশি ফটোগ্রাফারদের জন্য সরকারি প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানান আবদুল কাদের।

cox-pic-03.jpg

ফটোগ্রাফার এমদাদ বলেন, অভাবের কারণে নামমাত্র মূল্যে ক্যামেরাসহ বাড়ির নানান জিনিসপত্র বিক্রি করে পরিবার চালিয়েছি। এখন পর্যটন স্পট খুলে দিলেও ক্যামেরা না থাকায় ফটোগ্রাফি পেশায় ফিরতে পারবো কি-না চিন্তায় রয়েছি।

ফটোগ্রাফার মনজুর আলম, জয়নাল, আতা উল্লাহসহ আরও কয়েকজন বলেন, সৈকত তীর একটি রঙিন জগত ছিল। এখানে নিত্য নতুন মানুষগুলোর স্মৃতিধারণ করিয়ে আমরা ভালোই চলেছি। কিন্তু এভাবে সব ছন্দপতন হবে কল্পনায়ও ছিল না। তাই কিছুই জমানো হয়নি। পর্যটন একটি চলমান ব্যবসা, এ কারণে এখানেই আজীবন কর্মক্ষেত্র সচল থাকবে হিসেব করে অন্য কোনো পেশার সঙ্গে নিজেকে জড়াইনি। এখন ধার-দেনা করে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

ইনানী সৈকতের ফটোগ্রাফার রাসেল মুহাম্মদ বলেন, মা-বাবা ও ভাই-বোন নিয়ে আটজনের পরিবার আমার। বাবা চাষাবাদ করে টেনেটুনে সংসার চালান। সৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসারের গতি সচল করতে সহায়তা করতাম। কিন্তু সৈকত বন্ধ হওয়ার পর থেকে পরিবারের গতিও কচ্ছপ গতিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

রয়েল টিউলিপ পয়েন্টে পর্যটকদের ছবি তুলতো আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ সৈকতে নামা পর্যটকরা বিত্তশালী। এখানে কাজ করে প্রতিদিন হাজার-দেড়েক টাকা আয় হতো। এখানকার আয়ে বয়োবৃদ্ধ বাবাসহ ভাই-বোন মিলে ৯ জনের পরিবার স্বচ্ছন্দ্যে চলতো। এখন আয় নেই, তাই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারের।

cox-pic-03.jpg

ইনানী এলাকার ফটোগ্রাফারদের সুপারভাইজার আহমদ মনির বলেন, করোনায় আয় বন্ধ তাই জীবন সচল রাখতে সুদে বেশ কিছু টাকা ধার নিয়েছি। সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অধিকাংশেরই একই অবস্থা বলে দাবি করেন তিনি।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটন সেবায় প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান আত্মনিয়োগ করে পর্যটনের গতি সচল রেখেছে। কিন্তু গত চার মাস ধরে কক্সবাজারে সব ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে পর্যটনের অর্থনীতি নিম্নমুখী। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ছোট-বড় সব পেশাজীবীর খবর নেয়া সরকারের দায়িত্বে পড়ে। কিন্তু দানে পেট ভরানো যায় না। স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া গেলে এখানে সংযুক্ত মানুষগুলোর জীবনের গতি আবার সচল হবে বলে আমার বিশ্বাস।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, করোনা সব খানেই স্থিতাবস্থা এনেছে। পর্যটনসেবী ছোট-বড় সব পেশায় জড়িতদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হয়েছে। সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পে। চলমান পরিস্থিতি সরকারের ঊর্ধতন মহল অবগত রয়েছে। অতি শিগগিরই পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে।

সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম