ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রাঙামাটিতে বিকশিত হচ্ছে না ক্ষুদ্র শিল্প

প্রকাশিত: ০৯:১০ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রকল্পেও তেমন কোনো সফলতা আসেনি। রাঙামাটিতে ব্যক্তি উদ্যোগে হাতেগোণা কয়েকজন ক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারলেও উন্নয়নে বিকশিত হতে পারেনি এ শিল্প।

সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেই, নেই পৃষ্ঠপোষকতা। এগিয়ে আসছেন না বিনিয়োগকারীরাও। ফলে বিকশিত হতে পারছে না রাঙামাটির সম্ভাবনাময় এ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়ে অনেকে এগিয়ে এলেও বিনিয়োগের অভাবে সফল হতে পারেননি তারা। সরকারের কার্যকর উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন না আগ্রহীরা। এছাড়া পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় এগিয়ে আসতে চান না কোনো বিনিয়োগকারী।

rangamati তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণে একটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রকল্প চালু রয়েছে। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ ও বরাদ্দের অপ্রতুলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটিও মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে বলে জানান দায়িত্বশীলরা।

জানা যায়, প্রায় আঠারো বছর আগে রাঙামাটি সদরের মানিকছড়িতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনার কাজ শুরু হলেও তা এখনো শেষ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে ওই শিল্পনগরী স্থাপনার কাজ শুরু হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। কিন্তু এর নির্মাণ কাজ আজও শেষ হয়নি।

কুটির শিল্পে সফল নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা খীসা জাগো নিউজকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। এটি কিছুটা কষ্টের হলেও লাভজনক। স্বল্প পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করা যায়। তবে উদ্যোক্তাদের কর্মদক্ষতা দরকার। এজন্য আগে প্রশিক্ষণ নেয়া উচিত। এজন্য পৃষ্ঠপোষকতারও দরকার। এখানকার বেশির ভাগ লোকজন দরিদ্র। বেকারদের পক্ষে উদ্যোগের আগ্রহ থাকলেও বিনিয়োগের অভাব। তাই আর্থিক সহায়তাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকে স্বাবলম্বী হতে পারবেন কুটির শিল্পে।

মঞ্জুলিকা খীসা বলেন, তিনি প্রায় আড়াই দশক আগে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির মাঝেরবস্তী এলাকায় ‘বেইন টেক্সটইল’ নামে কয়েকটি তাঁত নিয়ে একটির কারখানা চালু করেন। পরে নিজের অনেক কষ্টের বিনিময়ে সেটির উন্নয়ন ঘটে। এতে করে আসে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা। বর্তমানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে একজন সফল উদ্যোক্তা তিনি।  

প্রকল্প সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম কুটির শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন তিন পার্বত্য জেলার ২৭টি তাঁত প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন এবং পাঁচটি বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র থাকলেও প্রকল্পের তেমন উন্নতি হয়নি। পাশাপাশি ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত টেক্সটাইল, বেত ও বাঁশ শিল্প, আসবাবপত্র কারখানা, কোমর তাঁতসহ তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্প পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পার্বত্যাঞ্চলে বাড়ছে বেকারত্ব।

জানা গেছে, পার্বত্য জেলাগুলোয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশে ১৯৭৪ সালে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেটির কাঙ্খিত সফলতা নেই। পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাত করার লক্ষে ২০০৩ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর পার্বত্য বাণিজ্য মেলা আয়োজনের পদক্ষেপ নেয়া হয়। বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ২০০৩ সালে রাঙামাটিতে, ২০০৪ সালে বান্দরবানে এবং সর্বশেষ ২০০৫ সালে খাগড়াছড়িতে ওই পার্বত্য বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কি কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে তা জানা যায়নি।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বিসিকের উদ্যোগে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম কুটির ও গ্রামীন শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প’ স্থাপন করা হয়। পরে প্রকল্পটি পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করে সরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থাভাবে তাও উন্নয়নশীল নয়।

তবে পার্বত্য এলাকায় বেকারত্ব দূরীকরণ ও আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৯১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার বিভাগটিকে হস্তান্তর করার পর থেকে রাঙামাটিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে আসছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। তার আগে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কুটির শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। প্রকল্পটি ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর হতে শুরু হয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে চলে ১৯৮৯-৯০ পর্যন্ত।

পরে ১৯৯০-২০০৫ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বিভিন্ন উন্নয়ন ও উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন পার্বত্য জেলায় ২৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কুটির শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প নামে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কেন্দ্র রয়েছে রাঙামাটিতে ১৫, খাগড়াছড়িতে ৯ ও বান্দরবানে তিনটি। প্রকল্পটি সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত হয়েছে।

তিনি জানান, প্রকল্পের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী ভূমিহীন, প্রায় ভূমিহীন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বাড়ানো, স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, নির্বাচিত উৎপাদন উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবিতকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্প পণ্যের বিপণন সহায়তাকরণ এবং জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। প্রকল্পটির প্রধান কার্যালয় রাঙামাটি শহরের কালিন্দীপুরে এক দশমিক শুন্য পাঁচ একর জায়গার ওপর নির্মিত নিজস্ব ভবনে। উদ্যোক্তাদের যথাযথ সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এ খাতে সরকারের বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এমজেড/আরআইপি