কয়েন নিয়ে বিপাকে নওগাঁর মানুষ
নওগাঁয় কয়েন (ধাতব মুদ্রা) অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারিভাবে এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন নিষিদ্ধ করা না হলেও মিথ্যা গুজবে এটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ব্যাংকেও নেয়া হচ্ছে না কয়েন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তালবাহানার কারণে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে ব্যবসায়ীক দিক থেকে ক্ষতি হবে। সেই সঙ্গে মূলধনও সঙ্কটে পড়বে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজার থেকে কয়েনগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে উঠিয়ে নিয়ে তা বাতিল ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ভিক্ষুক থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কয়েনের লেনদেন প্রায় বন্ধের উপক্রম।এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা। কয়েন না নেয়ায় ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। সবচেয়ে মহা সঙ্কটের মধ্যে আছেন বেকারি ও ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীসহ প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে কয়েন নিয়ে পণ্য বিক্রি তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
নওগাঁ সোনালী ব্যাংক ক্যাশ শাখা সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৮টি শাখার প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো কয়েন জমা আছে। বেশি পরিমাণ কয়েন জমা নিতে না পারলেও গ্রাহকদের ভোগান্তির জন্য কিছু পরিমাণ জমা নেয়া হয়। ২শ থেকে ৫শ টাকার মতো কয়েন জমা নেয়া হয় বলে জানা গেছে।
কয়েনের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ভোগান্তির কথা। শহরের অপূর্ব স্টোরের মালিক অপূর্ব সাহা জাগো নিউজকে জানান, ব্যবসার জন্য এক সময় কয়েন কিনে নিতে হয়েছে। আর এখন কয়েন ক্রেতাদের দিতে এবং নিতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পূবালী ব্যাংকে আমার লেনদেন থাকার পরও কয়েন দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে না। কয়েনতো দূরের কথা, এমন কি কাগজের পাঁচ টাকার নোটের বান্ডিলও গ্রহণ করে না। দোকানে এখন প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো কয়েন জমা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
অজিত সিগারেট স্টোরের মালিক অজিত সরকার জাগো নিউজকে জানান, কোম্পানির লোকজন কয়েন নিতে চান না। মালপত্র নেয়ার সময় তাদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করতে কয়েন নিতে হচ্ছে। বিক্রির সময় ক্রেতাদের কিছু কয়েন দিতে পারলেও মহাজনরা কয়েন গ্রহণ করেন না। এছাড়া সরকার নিষেধ করেনি কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কয়েন গ্রহণ করছে না।
এমনকি কাগজের দুই টাকার নোটও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে না। এতে ক্রেতাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে। দোকানে এখন এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো জমা আছে।
এছাড়া বন্ধন মেডিকেল স্টোরের মালিক বন্ধন জাগো নিউজকে জানান, ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যান কয়েন গ্রহণ করতে চান না। সেলসম্যানরা অনুরোধ করে জানান, অফিসে কয়েন নিতে ঝামেলা করেন। ক্রেতারা ওষুধ কিনতে আসলে কয়েন নিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কয়েন গ্রহণ করে না। আমরা যারা দোকানদার আছি কয়েন নিয়ে এখন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দোকানে প্রায় ছয় হাজার টাকার মতো কয়েন জমা আছে।
বাজার করতে আসা সুবিতা জাগো নিউজকে জানান, বাচ্চাদের হাত খরচের জন্য মাটির ব্যাংকে এক, দুই ও পাঁচ
টাকার কয়েন জমিয়েছি। কয়েন চলছে না গুজবে ব্যাংকটি ভেঙে ১৪শ টাকার মতো পেয়েছি। কয়েন নিয়ে বাজারে এসে দেখি চালানো যাচ্ছে না। দোকানদাররা কয়েন নিচ্ছেন না।
সিরাজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক সিরাজুল ইসলামের তিন হাজার টাকার কয়েন, মুড়ি ব্যবসায়ী লালন সরকার পাঁচ হাজার টাকার কয়েন, নওগাঁ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মাহবুবুল হকের চার হাজার টাকার কয়েন, সদরের শৈলগাছী দিঘীরপাড় মুদি দোকানদার সেকেন্দার আলী ১৮শ টাকার কয়েন জমা আছে। বিভিন্ন মুদি ও চায়ের দোকানে লেনদেনে ১শ থেকে ২শ টাকার সমপরিমাণ কয়েন নিতে হচ্ছে। কয়েন না নিলে মালামাল ফেরত দেয়া হবে। এতে যেটুকু লাভ ছিল তা কয়েন হয়ে পড়ে আছে। ব্যাংকগুলো না নেয়ায় এখন তা অচল হওয়ার উপক্রম।
নওগাঁ অগ্রণী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক (এজিএম) আব্দুল হামিদ জাগো নিউজকে জানান, সরকার থেকে ধাতব মুদ্রা এক, দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন বন্ধ ঘোষণা করেনি। অত্র শাখায় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এছাড়া গ্রাহকের লেনদেন থাকতে হবে। গ্রাহকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১শ টাকা পর্যন্ত কয়েন গ্রহণ করা হয়। অ্যাকাউন্ট না থাকলে সাধারণদের কয়েন গ্রহণ করা হয় না। ব্যাংকে বর্তমানে দুই টাকা কয়েন ১০ হাজার টাকার মতো জমা আছে বলে জানান তিনি।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ আলী দ্বীন জাগো নিউজকে জানান, কয়েন নিয়ে নওগাঁর ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের মধ্যে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। চেম্বারের পক্ষ থেকে এ সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যে তা সমাধান করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে নওগাঁয় মার্কেন্টাইল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ নিয়ে কয়েন গ্রহণ করবে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গেও কয়েন সমস্যার সমাধান করার ব্যাপারে বসা হবে।
আব্বাস আলী/এমজেড/আরআইপি