বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে কুপিয়ে জখম
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বরগুনার তালতলী উপজেলায় এক কিশোরীকে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার সকালে তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নের দক্ষিণ সওদাগর পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ওই কিশোরীকে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ওই কিশোরী বরগুনা সদর হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের ৬নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আহত কিশোরীর মা মোসা. রেনু বেগম জাগো নিউজকে জানান, তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নের দক্ষিণ সওদাগর পাড়া গ্রামে তার কিশোরী মেয়ে আয়েশাকে (ছদ্ম নাম) নিয়ে তিনি বসবাস করেন। তালতলী উপজেলার তালুকদার পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় গত দু’বছর ধরে একই ইউনিয়নের পূর্ব সওদাগর পাড়া গ্রামের সুলতান গাজীর ছেলে আল আমিন (২৩) তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আয়েশাকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দেন।
কিন্তু এতে আয়েশা রাজি না হওয়ায় স্কুলে যাওয়া-আসার পথে আল আমিন তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে নিরাপত্তার অভাবে আয়েশাকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন তার মা। আয়েশা নিয়মিত ক্লাস না করেও তালুকদার পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
আয়েশার মা আরো জানান, আয়েশা এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বাখাটে আল-আমিনের ভয়ে আয়েশাকে তিনি কলেজে ভর্তি করাননি। আল আমিন দু’মাস আগে আয়েশাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে তার পরিবার রাজি না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আল-আমিন তার চার-পাঁচজন সহযোগীকে নিয়ে আয়েশাকে জোরপূর্বক তাদের বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আয়েশা ও তার মার ডাক-চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যান।
পরের দিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা আবার ওই বাড়িতে গিয়ে আয়েশাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আয়েশা ও তার মা আবারো ডাক-চিৎকার শুরু করে। তাদের ডাক-চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে আল আমিন ও তার সহযোগীরা আয়েশাকে তুলে নিতে ব্যর্থ হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে এবং লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় আয়েশাকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ও পরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জাগো নিউজকে জানান, আয়েশার বাম পায়ে গুরুতর জখম এবং হাতে আঘাত রয়েছে। তাই তাকে শনিবার দুপুরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তালতলী উপজেলার তালুকদার পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের জাগো নিউজকে জানান, আয়েশা ২০১০ সালে তালুকদার পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। স্থানীয় বখাটেদের উৎপাতের কারণে ২০১৩ সালে আয়েশাকে তার পরিবার লাউপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। পরে বিষয়টি তিনি জানতে পেরে আয়েশার বাড়িতে গিয়ে আয়েশা ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে আয়েশার নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করলে তার মা আয়েশাকে পুনরায় তার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।
বখাটেদের উৎপাতের কারণে নিয়মিত ক্লাশ না করেও আয়েশা এ বছর তার স্কুল থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক আবু তাহের আরও জানান, তুলনামূলকভাবে ভাল ফলাফল করে মেয়েটি বখাটেদের কারণে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃজনক।
এ বিষয়ে তালতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আকতার জাগো নিউজকে জানান, জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ করেনি আয়েশার পরিবার। তবে অভিযোগ পেলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। আর নির্যাতনকারীদের হুমকিতে মেয়েটির পরিবার মামলা করতে পারেনি এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এসএস/এমএস