খুলনার করোনা হাসপাতালে ‘বিছানা খালি নেই’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে মাত্র একশটি শয্যা। কিন্তু খুলনায় প্রতিদিন একশরও বেশী মানুষ (ল্যাব টেস্ট অনুযায়ী) করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে। সে কারণে খুলনায় আরও বেশি করোনা হাসপাতাল ও আরটিপিসির ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার নেতারা।
তবে খুলনার সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, খুলনার দুটি বড় বেসরকারী হাসপাতালের পর আরও দুটি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
করোনা হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা না থাকা এবং সরকারি-বেসরকারি অন্য কোনো হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে খুলনার করোনা হাসপাতালে ‘বিছানা খালি নেই’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডায়াবেটিক হাসপাতালে ৮৫টি এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আইসিইউ ভবনে স্থাপিত ফ্লু কর্নারের করোনা ওয়ার্ডে ১৫টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার করোনা হাসপাতালের ৮৫টি শয্যা পূর্ণ হয়ে যায় এবং ফ্লু কর্নারে আছেন বেশ কয়েকজন রোগী। ফ্লু কর্নারে প্রতিনিয়ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
সূত্র জানায়, করোনা হাসপাতালে শয্যা না থাকায় একজন পজিটিভ রোগীকে ফ্লু কর্নারের রেড জোনে রাখা হয়। পরে অন্য রোগী ও স্বজনদের আপত্তিতে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। দ্রুত ফ্লু কর্নার ও করোনা হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।
সূত্র আরও জানায়, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুলনা জেনারেল হাসপাতালের ৪২টি শয্যা প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। খুলনার দুটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড চালুর নির্দেশনা দেয়া হলেও হাসপাতাল দুটি এখনও প্রস্তুত হয়নি। ফলে করোনা রোগীরা রয়েছেন আতঙ্কে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় করোনা ইউনিট চালুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেখানে এখন অক্সিজেন প্লান্ট এবং সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ করতে এখনও এক থেকে দেড় মাস লাগবে।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০টি এবং ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ৩০টি শয্যা চালুর নির্দেশ দেয়া হয়। তারা প্রস্তুতিও শুরু করেছে। পরে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনা ইউনিট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের শয্যাগুলো চালু হয়ে গেলে এই সমস্যা কেটে যাবে।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে শনিবার খুলনায় আরও হাসপাতাল ও আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বিএমএ নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, গত জুন মাস থেকে খুলনায় করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতালটিতে এখন রোগী পরিপূর্ন। নতুন আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য খুলনায় চিকিৎসার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যেকারণে বাড়িতে থেকে ঘাটতি চিকিৎসায় অনেকেই মৃত্যবরণ করছেন। জটিল অবস্থায় অক্সিজেনের অভাবে অনেকেই শ্বাসকষ্টে বাড়িতে মৃত্যুবরণ করছেন। আরও বেশি হাসপাতাল স্থাপন করা হলে এরমধ্যে অনেক মৃত্যুই হয়ত ঠেকানো যেত।
খুলনায় কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য বিকল্প চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব না হলে চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু ঘটবে। আর সে দায় হয়ত চিকিৎসকদের উপর চাপিয়ে ডা. মো. আব্দুর রকিব খাঁনের মতো আর কোনো মেধাবী চিকিৎসককে পিটিয়ে মারা হবে। সে কারণে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সকল ব্যবস্থাপনাসহ আরও একটি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল স্থাপন করা এ অঞ্চলের মানুষদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত খুলনা বিভাগের অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত সন্দেহভাজন করোনা রোগী পরীক্ষা করানোর জন্য আসেন। দীর্ঘ সময় লাইনে থেকেও সবাই নমুনা প্রদান করতে পারেন না। যারা নমুনা প্রদান করেন তাদেরও দীর্ঘদিন রির্পোট সংগ্রহ করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘ সময়ে রোগাক্রান্ত থেকে পথে যাওয়া আসা ও ঘোরাঘুরির কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আলমগীর হান্নান/এফএ/পিআর