ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

করোনায় ঝুঁকি নিয়ে ৯১ লাশ দাফন, নীরবে কাজ করছে ‘এহসান পরিবার’

জেলা প্রতিনিধি | নারায়ণগঞ্জ | প্রকাশিত: ১২:১৬ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২০

করোনা কিংবা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে তার কাছে যাচ্ছে না মানুষ। এমনকি নিকট আত্মীয়রাও এগিয়ে আসছে না। লাশ ধরছে না কেউ। ঠিক সেই সময় নারায়ণগঞ্জে করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে একের পর এক মরদেহ দাফন করে যাচ্ছেন ‘এহসান পরিবার’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

তাদের কাছে ফোন আসলেই ছুটে যান মৃত ব্যক্তির বাড়িতে। মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর যত রাতই হোক না কেন এহসান পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ বুঝে নেন। হোক তা করোনায় কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত। মৃতের গোসল থেকে শুরু করে জানাজা দাফন-কাফন সবই করেন তারা।

এভাবেই এহসান পরিবার করোনা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ৯১টি মরদেহ দাফন ও ও সৎকার করেছে। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, রাজধানী ঢাকাতেও মরদেহ দাফনে কাজ করছে এহসান পরিবার। এর মধ্যে একজন হিন্দু ব্যক্তির সৎকারও করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা।

এরই মধ্যে ‘এহসান পরিবার’ নামে একটি ফেসবুক পেজ জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আগে সংগঠনের সদস্যরা করোনার প্রথম থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহরের ভাসমান মানুষদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ, দুস্থ ও মধ্যবিত্তদের মাঝে আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সামগ্রী বিরতণসহ বিনামূল্যে শিশু খাদ্য ও দুধ বিতরণ করছেন। যা এখনও চলমান।

corona01.jpg

সংগঠনটির জিম্মাদার নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আনোয়ার হোসেন বলেন, এহসান শব্দের অর্থ দয়া, উপকার ও সহযোগিতা। করোনা পরিস্থিতির প্রথম দিকে মার্চ মাসে ‘এহসান পরিবার’ নামে একটি সংগঠন করে আমরা প্রায় ১১ দিন যাবত জেলায় ভাসমান মানুষদের মধ্যে ৩০০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি। আমরা কিছু তাবলিগ জামাতের সাথীসহ নানা সংগঠনের পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা অনুদান দিয়ে সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করি। এরই মধ্যে জেলায় করোনায় মারা গেলে মানুষ মরদেহ ধরতে এগিয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে কেউ করোনাসহ নানা ব্যাধিতে মারা গেলে বিনা পারিশ্রমিকে জানাজা,দাফন-কাফন ও সৎকার সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। সেই ধারাবাহিকতায় ৩ জুলাই পর্যন্ত ৯১টি মরদেহ দাফন ও সৎকার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন হিন্দুও রয়েছেন। এছাড়াও ত্রাণ বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদান ও সামর্থ্যহীন শিশু পরিবারের মধ্যে দুধ বিতরণ কর্মসূচি চলছে।

সংগঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কাজের প্রথম উদ্দেশ্যে মানুষ দেখার আগে আল্লাহর কাছে আমাদের কাজ কবুল হচ্ছে কি-না সেটা দেখা। বেশি প্রচার-প্রচারণায় জড়িয়ে পড়লে নিয়তের একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে শরিয়ত মতে মানুষকে ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দিতে ও সম্পৃক্ত করতে আমরা প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকে আছে এই ভালো কাজে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন না।

আনোয়ার হোসেন বলেন, সংগঠনের প্রথম থেকেই আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, আখেরাতের জন্য কাজ করে যাব। এ লক্ষ্যে আমাদের সংগঠনটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে আমাদের এই স্বেচ্ছাশ্রমে রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমরা তাদেরকে আমাদের শরিক বলতে পারি। তবে সংগঠনটির সবচেয়ে বড় পরিচয় এটি একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী পরিবার।

শাহাদাত হোসেন/আরএআর/এমএস