স্বজনহারা মীরকাদিম, বাড়ি বাড়ি শোকের মাতম
মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া মর্নিং বার্ড লঞ্চটিতে প্রতিদিনের মতো সোমবারও ব্যাংক কর্মকর্তা, ফল ও সবজি ব্যবসায়ীসহ ছোট ছোট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী স্ব স্ব কর্মের উদ্দেশে ঢাকায় যাত্রা করেছিলেন। সদরঘাট যাওয়ার পথে শ্যামবাজার সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় তাদের লঞ্চটি। সে সময় লঞ্চের সামনে থাকা যাত্রীদের মধ্যে কিছু যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হলেও বেশিরভাগ যাত্রীর সলিল সমাধি ঘটে।
যাত্রীদের ভাষ্যমতে, লঞ্চটিতে এক থেকে দেড়শ জন যাত্রী ছিলেন। কিন্তু মীরকাদিম নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, লঞ্চটির ধারণক্ষমতা সোয়াশো। আর লঞ্চটিতে ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন।
সরেজমিনে মীরকাদিম লঞ্চঘাট ও স্বজনহারা পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মর্নিং বার্ড লঞ্চটি প্রতিদিন সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মীরকাদিম ঘাট থেকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এক থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে গন্তব্যে পৌঁছাতে।
দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চযাত্রী নাজমা আক্তার বলেন, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলাম। লঞ্চটি যে পাশ দিয়ে ডুবেছিল তার বিপরীত পাশের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পরিচিত মুখগুলো মুহূর্তে লাশ হলো। এমন ঘটনা সহ্য করা যায় না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ছোট একটা লঞ্চে ১০০ থেকে ১১০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ঢাকায় আসে। এর আগেও লঞ্চটি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অব্যবস্থাপনার কারণেই আজ এত বড় ঘটনা ঘটল।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ও করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব না মেনে যত্রতত্র যাত্রী পারাপারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুর্ঘটনা থেকে জীবিত ফিরে আসা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তার বাড়ি মীরকাদিম পৌরসভার এনায়েতনগরে। রাজধানীর বঙ্গবাজার কাপড়ের দোকানে কাজ করেন তিনি। গত আট বছর ধরে কাঠপট্টি থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। সোমবার সকালে প্রতিদিনের মতোই মর্নিং বার্ড লঞ্চে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তিনি। তার সাথে মীরকাদিম পৌর এলাকার প্রায় ১০ জন ছিলেন। কথা আর আড্ডায় তারা লঞ্চটিতে মেতে ছিলেন। ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকার কাছাকাছি গেলে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ তাদের লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি একপাশে কাত হয়ে যায়। পাশের সবাই ছিঁটকে নদীতে পড়তে থাকেন। তিনিও লঞ্চ থেকে পানিতে পড়ে যান।
তার দেখামতে, ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী তীরে উঠতে সক্ষম হয়। আবার পরিচিত অনেকে ডুবে যান। তিনিও প্রায় ডুবে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে আল্লাহর অশেষ রহমতে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তিনি বলেন, যাদের সাথে পাঁচ মিনিট আগেও প্রাণবন্ত আড্ডায় ছিলাম। চোখের সামনে তারা ডুবে গেল। এটা কতটা কষ্টের ভাষায় বোঝানো যাবে না।
ফল ব্যবসায়ী রিকাবীবাজার পূর্বপাড়ায় মো. ওমর বলেন, আমি লঞ্চের সামনে সারেংয়ের পাশে ছিলাম। যখন ঘাট দেখা গেল, তখন বেরিয়ে সামনে আসি। শ্যামবাজারের কাছাকাছি এলে দেখি ময়ূর-২ লঞ্চটি সামনের অংশ দিয়ে মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথেই মর্নিং বার্ড উল্টে যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে আমি জীবন বাঁচাতে নদীতে লাফিয়ে পড়ি। আমার সাথে সাথে আরও অনেককেই নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখি। অনেকেই পানির নিচ থেকে আমার পা টেনে ধরে। তখন জীবন বাঁচাতে তাদের ছেড়ে পানির উপরে উঠি। এমন সময় দেখি এক নারী হাবুডুবু খাচ্ছেন। তখন তাকে টেনে কাছাকাছি থাকা একটি নৌকার কার্নিশে ধরিয়ে দেই। তারপর আমি সাঁতরে পাড়ে উঠি।
এই লঞ্চ দুর্ঘটনায় মীরকাদিম পৌরসভার কাঠপট্টি, রামসিং, রিকাবীবাজার, পশ্চিমপাড়া, গোয়ালগোনি, বজ্রযোগিনী ও রামপালের যাত্রী ছিলেন বেশি। এ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের ৩০ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। আর এসব স্বজনহারা বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাড়ি বাড়ি চলছে কান্নার রোল। কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ স্ত্রী, কেউ ভাই, কেউ বোন আবার কেউবা মা-বাবা। স্বজন হারিয়ে কেই কাঁদছে হাউমাউ করে। আবার কেউ বোবা কান্না কাঁদছে। নির্বাক হয়ে অনেকে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। স্তব্ধ হয়ে গেছে পশ্চিম রিকাবীবাজার এলাকা। এখানে বাড়ি বাড়ি শোকের মাতম। উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে প্রতিটি বাড়িতে। কেউ দিচ্ছেন সান্ত্বনা। কেউবা নিজেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
মুন্সীগঞ্জের রিকাবীবাজারের পশ্চিমপাড়ার মৃত আব্দুল রহিমের ছেলে দিদার হোসেন (৪৫) ছিলেন ঢাকার রহমতগঞ্জের ডালের ব্যবসায়ী। সোমবার সকালে বড় বোনের অসুস্থ স্বামীকে দেখতে আরেক বোন রুমা বেগমকে (৪০) নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে লঞ্চে করে রওনা হন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় বোনসহ তিনি নিহত হন। স্বজনরা জানান, মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে করেছিলেন দিদার।
পশ্চিমপাড়ার পরশ মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫৫) ও তার মেয়ে সুমা বেগম (২৫) যাচ্ছিলেন সদরঘাটের সুমনা ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে। স্ত্রী সুফিয়া বেগম মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন মেয়ে সুমা বেগম। তাদের বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম। একই এলাকার শাহজাহান শরীফের ছেলে শিপলু শরীফ ঢাকায় যাচ্ছিলেন তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মালামাল আনতে। কিন্তু লঞ্চ দুর্ঘটনায় তার সলীল সমাধি হলে তার বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম।
ভবতোষ চৌধুরী নুপুর/বিএ/জেআইএম
টাইমলাইন
- ০৩:১৬ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০ ময়ূর-২ লঞ্চের মাস্টার আবুল বাসার তিন দিনের রিমান্ডে
- ০২:৪৬ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২০ ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক ৩ দিনের রিমান্ডে
- ১০:০৭ এএম, ০৯ জুলাই ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : ময়ূর-২ এর মালিক গ্রেফতার
- ১০:১৩ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ বাড়ি ফিরে বাজার করে দেবে বলেছিলেন বাবা, আর ফিরে এলেন না
- ০৯:৩০ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ মা-বোনকে খুঁজছেন রিফাত
- ০৮:১২ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ লঞ্চ দুর্ঘটনার আসামিরা দুষ্টুপ্রকৃতির, পেরে ওঠে না রাষ্ট্রপক্ষ!
- ০৬:৩৬ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় আরও এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার, মোট ৩৪
- ০৫:৩৩ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : ৭ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
- ০৪:২৮ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ ডুবে যাওয়া লঞ্চের মালিকেরও হদিস নেই
- ০১:৪৩ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে যা বললেন সুমন বেপারী
- ০১:২১ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ আরও এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার, মোট ৩৩
- ০১:০১ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ লঞ্চ তোলা হচ্ছে, পুরোপুরি তোলার পর আবারও উদ্ধার অভিযান
- ১২:১৩ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ লঞ্চ দুর্ঘটনা : মূল মাস্টার না, শিক্ষানবিশ চালাচ্ছিলেন ময়ূর
- ১১:২৯ এএম, ৩০ জুন ২০২০ ময়ূর-২ লঞ্চ মালিকের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতারে অভিযান চলছে
- ০৯:১৭ এএম, ৩০ জুন ২০২০ যেন মায়ের দোয়াতেই ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে বেঁচে ফিরলেন সুমন
- ০৮:৫৩ এএম, ৩০ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : অভিযান অব্যাহত, ডুবুরিরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন
- ০৮:৩৩ এএম, ৩০ জুন ২০২০ স্বজনহারা মীরকাদিম, বাড়ি বাড়ি শোকের মাতম
- ১২:৩৪ এএম, ৩০ জুন ২০২০ উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা সেতুতে ফাটল, যান চলাচল বন্ধ
- ১২:০১ এএম, ৩০ জুন ২০২০ যেভাবে বুড়িগঙ্গার তলদেশে ১২ ঘণ্টা বেঁচে থাকলেন সুমন
- ১০:৩৭ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ ১২ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার এক ব্যক্তি
- ০৯:৫৬ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ ডাক্তার দেখাতে গিয়ে একই পরিবারের তিনজন লাশ
- ০৯:৩৫ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের শোক
- ০৯:৩৩ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ লঞ্চডুবির সময় শিশুসন্তানকে আঁচলে বাঁধলেন মা
- ০৯:২৫ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : পরিচয় মিলেছে নিহতদের
- ০৯:০০ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ লঞ্চ মালিক-চালক দায় এড়াতে পারে না : শাজাহান খান
- ০৮:৪৫ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ এটি দুর্ঘটনা নয়, একটি হত্যাকাণ্ড : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
- ০৫:৫৯ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক
- ০৪:৪০ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : ফখরুলের শোক
- ০৪:৩৬ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে আটকে গেল উদ্ধার করতে আসা জাহাজও
- ০৪:২৪ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : দেড় লাখ টাকা করে পাবে মৃতদের পরিবার
- ০৩:২৬ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : একের পর এক নিষ্প্রাণ দেহ উঠে আসছে
- ০৩:১৬ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় এসে বড় ভাইয়ের লাশ পেলেন পরশ
- ০২:৩৯ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রীর বর্ণনা
- ০২:২৫ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ লাশবাহী নৌকার চারপাশে ছোট নৌকার ভিড়, উদ্ধার কাজে সমস্যা
- ০২:০৯ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ ছেলেকে না পেয়ে পাগল হয়ে ঘুরছেন মা
- ০২:০৩ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ উদ্ধার তৎপরতার খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী
- ০১:৫৯ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ কেউ প্রিয়জনের লাশ পেয়ে কাঁদছেন, অনেকে না পেয়ে
- ০১:৫২ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : বিআইডব্লিউটিএ’র তদন্ত কমিটি গঠন
- ০১:৪৩ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ লঞ্চডুবিতে দোষীদের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি ন্যাপের
- ০১:৩১ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার
- ০১:০৮ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ মাঝ নদীতে স্বজনদের আহাজারি
- ১২:৪৮ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ ‘জানালা দিয়ে আমি বের হইছি, দুই মামা বের হতে পারে নাই’
- ১২:৪১ পিএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার
- ১১:৪৩ এএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার
- ১১:০৬ এএম, ২৯ জুন ২০২০ চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় লঞ্চটি
- ১০:৫৬ এএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসছে উদ্ধারকারী জাহাজ
- ১০:২০ এএম, ২৯ জুন ২০২০ বুড়িগঙ্গায় ৫০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবি, উদ্ধার তৎপরতা চলছে