ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সামাজিক হেনস্তার ভয়ে করোনা পরীক্ষায় অনীহা

জেলা প্রতিনিধি | ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ২৭ জুন ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। প্রতিদিনই গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হলেই করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু অনেকে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সামাজিকভাবে হেনস্তা হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষা করছেন না। এতে তাদের মাধ্যমে অন্য কেউ আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার অনেকেই আছেন যাদের উপসর্গ না থাকলেও সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা সদরের রাধানগর এলাকার বাসিন্দা ফজলে রাব্বী। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ৯ জুন রাতে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হন। সঙ্গে সর্দি-কাশিতে তার শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে করোনা পরীক্ষা করতে বলা হবে- সেজন্য আর হাসপাতালে যাননি রাব্বী।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখছি কেউ আক্রান্ত হলে প্রশাসন গিয়ে তার বাড়ি লকডাউন করে দিচ্ছে। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার একঘরে হয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরাও তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। আমাদের উপজেলা সদরেও কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছিল প্রশাসন। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির পুরো পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়েছে।

ফজলে রাব্বী বলেন, পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নমুনা দেইনি। ফার্মেসি থেকে সাধারণ জ্বর ও সর্দি-কাশির ওষুধ এনে সেবন করছি। পাশাপাশি গরম পানির ভাপ নিয়েছি। ফলে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠেছি।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, প্রতিদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন নতুন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার (২৬ জুন) পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৩৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন আটজন। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শরীরে করোনার উপসর্গ বহন করছেন অথচ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিচ্ছেন না- এমন বেশ কয়েকজনর সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তবে তারা শর্ত দিয়েছেন নাম-পরিচয় গোপন রাখার। শুধুমাত্র সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে নমুনা দিচ্ছেন না তারা।

জেলার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রামের এক যুবক গত ১০/১২ দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এছাড়াও সারা শরীরে ব্যথাও আছে তার। কিন্তু তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেননি।

তিনি জানান, ওষুধ সেবনের পাশাপাশি গরম পানির ভাপ নিচ্ছেন। এছাড়া লেবুর শরবত এবং আদা, দারচিনি ও লবঙ্গ দিয়ে নিয়মিত রং চা খাচ্ছেন। নিজে ভয় পাওয়ার পাশাপাশি পবিবারে সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এতে করে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন এই যুবক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মধ্যপাড়া মহল্লার এক যুবক জানান, তিনি নমুনা দেননি, অথচ গুজব ছড়ানো হয়েছে তিনি করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ হয়েছেন। পরবর্তীতে মহল্লার ছেলেরা তার বাড়িতে গিয়ে তাকে হেনস্তা করেন। পরিবারের সবাইকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেন। এতে করে তার পরিবারের লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) আবু সাঈদ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এখন লকডাউন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তবে আক্রান্তদের বাড়ির আশপাশের মানুষজনরা যেন আক্রান্তের পরিবারের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে তাদের পাশে দাঁড়ায়, সেজন্য আমরা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছি। আক্রান্তদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে প্রতিবেশীরা যেন সহযোগিতা করেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, নমুনা না দেয়ার ফলে উপসর্গ থাকা ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার কাজও করছেন। এই দুর্যোগে সবাইকে আগে সচেতন হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর/এমএস