ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই কৃষকদের

জেলা প্রতিনিধি | চুয়াডাঙ্গা | প্রকাশিত: ০৯:০৬ এএম, ২২ জুন ২০২০

চুয়াডাঙ্গায় সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর সমন্বয়ের অভাবে কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান এবং মিলাররা চাল দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ধান-চাল ক্রয়ের এক মাসের বেশি সময় পার হলেও মাত্র ৫৭ মেট্রিক টন ধান ও ১০৯৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। জীবননগর উপজেলা থেকে এখনও লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকের কাছ থেকে কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

কৃষকরা জানান, গুদামে ধান নিয়ে গেলে বলা হয় ভেজা। টাকার জন্য ঘুরতে হয় বেশ কয়েক দিন। সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ লাগে। খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ এছাড়াও নানা অজুহাত দেখায়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ মে চুয়াডাঙ্গায় সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে ৫ হাজার ৩১০ জন নির্বাচিত কৃষকের কাছ থেকে ৫ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন ধান ও ১৯৭ জন মিলারের কাছ ৭ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন চাল সরকারিভাবে ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সরকারিভাবে ধান কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা ও চাল ৩৬ টাকা দরে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলার ৫টি খাদ্য গুদাম থেকে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে।

জীবননগর উপজেলা থেকে এখনও সরকারিভাবে কোনো ধান ও চাল সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। কিন্তু এক মাস ১০ দিন পার হলেও সরকারিভাবে সামান্য পরিমাণে ধান-চাল সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫৭ মেট্রিক টন ও চাল সংগ্রহ হয়েছে ১০৯৯ মেট্রিক টন।

rice

চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস চারটি উপজেলার ৫টি গুদামে (চুয়াডাঙ্গা সদর, সরোজগঞ্জ, দর্শনা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা) সরকারিভাবে বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থেকে ৬০৫ মেট্রিক টন, সরোজগঞ্জ থেকে ৪০৩, দর্শনা থেকে ১৪২৮, জীবননগর থেকে ১০২৯ ও আলমডাঙ্গা থেকে ১৮৪৫ মেট্রিক টন করে ধান কেনা হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদরে ৪ মেট্রিক টন, সরোজগঞ্জে ১, দর্শনায় ৫০, জীবননগরে শূন্য ও আলমডাঙ্গায় ২ মেট্রিক টন করে ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস।

সরকারিভাবে জীবননগর থেকে ১০২৮ মেট্রিক টন ধান কেনার কথা থাকলেও খাদ্য বিভাগ এখনও কোনো ধান কিনতে পারেনি। জেলার ১৯৭ জন মিলারের কাছ থেকে ৭ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৯ মেট্রিক টন চাল কেনা সম্ভব হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদরে প্রায় ২০ মেট্রিক টন, সরোজগঞ্জে শূন্য, দর্শনায় ৩৫, জীবননগরে ৯২৮ ও আলমডাঙ্গায় ১১৬ মেট্রিক টন করে চাল ক্রয় করতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু সরোজগঞ্জে ৫৯৫ মেটিক টন চাল কেনার কথা থাকলেও কোনো চাল কিনতে পারেনি।

চালকল মালিকরা বলছেন, ৭ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন চাল দিতে হলে তাদের লোকসান হবে প্রায় চার কোটি টাকা। কারণ ভেজা ধান প্রতি মণ ১০২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৪১-৪২ টাকা। প্রতি কেজি চালে মিলারদের লোকসান গুনতে হবে ৫-৬ টাকা।

অপরদিকে কৃষকরা বলছেন, সরকারিভাবে ধানের দাম প্রতি কেজি ২৬ টাকা হওয়ায় ধান বিক্রিতে তেমন আগ্রহ নেই। গাড়ি ভাড়া দিয়ে সরকারি গুদামে ধান নিলে লোকসান হয়। এছাড়াও কৃষকদের নানা হয়রানি ও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়।

দামুড়হুদার কৃষক হান্নান আলী বলেন, সরকারিভাবে ধানের দাম অনেক কম হওয়ায় গ্রামে বিক্রি করেছি বেশি দামে। ধান নিয়ে গাড়ি ভাড়া দিয়ে দর্শনা যেতে হত। সেখানে নানা টালবাহানা করে। বলে ধান ভেজা শুকিয়ে নিয়ে আসতে হবে। দিন কামায় যায়। টাকা তুলতে ব্যাংকে ঘুরতে হয়। এ সব ভোগান্তির কারণে গুদামে ধান বিক্রি করি না।

rice

দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালী গ্রামের কৃষক ফকির মোহাম্মদ জানান, গুদামের লোকজন ধান নিয়ে গেলে মেশিন দিয়ে মেপে বলে- তোমার ধান ভেজা আছে। বিক্রি করতে হলে মণে কয়েক কেজি দিতে হবে না হলে শুকিয়ে নিয়ে এসো। গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে গাড়ি ভাড়া দিতে হয় ৫শ টাকা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল ইসলাম বলেন, বাইরে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা সরকারি গুদামে দিচ্ছে না। ব্যাংকে কৃষকদের ঘোরাঘুরি করতে হয়। হাটে-আড়তে ধান বিক্রি করলে ধান ভেজা আছে এ সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু আমরা ভেজা থাকলে ধান কিনি না। বাইরের বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি হওয়ায় সরকারিভাবে সংগ্রহ তেমন একটা নেই। কৃষক ও মিলারদের সরকারি খাদ্য গুদামে চাল-ধান দিলে সমস্যায় পড়তে হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ শেখ বলেন, খাটো বাবু ধান ১০২০ টাকা দরে কিনেছি। ধান ভেজা আছে। সরকারিভাবে দাম পাব ৩৬ টাকা। এখন প্রতি কেজি চাল তৈরি করতে খরচ হচ্ছে ৪১-৪২ টাকা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি তাই নিয়ম মেনে চাল দেব। কিছু দিন বাড়তি সময় দিলে চাল দিতে পারবো। চার কোটি টাকা লোকসান হবে ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল দিলে। কর্তৃপক্ষকে বলেছি দুই টাকা বাড়তি দিলে চাল দেয়ার চেষ্টা করবো। চালে লোকসানের সময় কাউকে পাশে দেখছি না, কিন্তু সুসময়ে অনেককেই দেখা যায়। এত টাকা লোকসান দিয়ে চাল দিতে হলে অনেকের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। এ পর্যন্ত গুদামে ১০৯৯ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছি আমরা।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, চাল পেয়ে যাব, কিন্তু ধানের ব্যাপারে সমস্যা রয়েছে। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা খাদ্য গুদামে আসতে চায় না। চেষ্টা করছি ধান ও চাল কেনার জন্য। হাতে দেড় মাসের মত সময় আছে এখনও। সমস্যগুলো সমাধান করার চেষ্টা করছি।

সালাউদ্দীন কাজল/আরএআর/জেআইএম