অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভরসা কেবল ‘আল্লাহ’
রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। করোনার চিকিৎসায় রামেক হাসপাতালে চালু করা হয়েছে আলাদা ওয়ার্ড। রাজশাহীর খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতানে খোলা হয়েছে আইসোলেশন ইউনিট। প্রতিদিনই করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন লোকজন। এছাড়াও করোনা নিয়েই হাসপাতালে আসছেন কেউ কেউ।
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর রোগীদের ভরসা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে হাসপাতালের নার্স। জরুরি বিভাগ থেকে করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড, আইসিইউ এমনকি মিশন হাসপাতালে রোগী আনা নেয়া করতে হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক এ কাজেই যুক্ত।
রামেক হাসপাতালের আট চালকের ছয়জনই যুক্ত করোনাযুদ্ধে। করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা হলেও চালকদের সেটি হয়নি। দিন শেষে বাড়ি ফিরছেন এসব চালক। কেবল নিজে নন, ঝুঁকিতে ফেলছেন পুরো পরিবারকে।
রামেক হাসপাতালের প্রধান অ্যাম্বুলেন্স চালক আশরাফুল আলী জানান, তারা সব সময় রোগীদের নিয়েই কাজ করেন। বিয়ষটি সেইভাবেই নিয়েছে পরিবার। নিজেরা যেমন এই সংকটকালে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কাজ করছেন, পরিবারের ভরসাও তাই।
তিনি বলেন, গত ১ এপ্রিল থেকে করোনা রোগী বহন শুরু হয়েছে রামেক হাসপাতালে। শুরুর দিকে তারা চিকিৎসক-নার্সদের মতো কোয়ারেন্টাইন চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বল্প সময় রোগীদের সংস্পর্শে থাকা এবং নিরাপদ দূরত্বে থেকে দায়িত্ব পালনের কারণে এটির প্রয়োজন নেই। তবে শুরু থেকেই পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পাচ্ছেন তারা।
আশরাফুল আলী জানান, রোগী বহন তাদের প্রধান দায়িত্ব। আর দায়িত্ব পালনে গিয়ে এখনও চালকদের কেউ অসুস্থ হননি। কারও করোনা পরীক্ষাও হয়নি। অসুস্থ হলে পরীক্ষাসহ চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
একই ভাষ্য হাসপাতালের আরও কয়েকজন চালকের। তারা জানিয়েছেন, অনেক সময় করোনা রোগীদের সঙ্গে তাদের কোনো স্বজন থাকেন না। ওই সময় চালকরাও নার্সদের সঙ্গে রোগীদের ওঠা-নামায় সাহায্য করেন। গাড়িতে ওঠার সময় পুরো সুরক্ষা নিয়েই ওঠেন তারা। তারপরও শঙ্কা থেকেই যাই।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, সবখানেই সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। রামেক হাসপাতালও এর বাইরে নয়। ঝুঁকি জেনেই সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা। অ্যাম্বুলেন্স চালকরা এদের বাইরে নন।
তিনি আরও বলেন, করোনা রোগী বহনে রামেক হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে। চালকসহ অ্যাম্বুলেন্সে থাকা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়েই থাকেন। রোগী বহনের পর পুরো অ্যাম্বুলেন্স জীবাণুমুক্ত করা হয়। রোগী আনা নেয়া ছাড়াও প্রয়োজনে নমুনা সংগ্রহেও যায় রামেক হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জনের দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৭৬ জনের। এদের মধ্যে হাসপাতালে এসেছেন মাত্র ২২ জন। করোনা নিয়ে রামেক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। কিন্তু সিভিল সার্জনের দফতর মাত্র একজনকে রামেক হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে।
বিয়ষটি নিশ্চিত করে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, করোনা রোগী বহনে তারা নয় উপজেলার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ রেখেছেন। খবর পেলে এই অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যাবে রোগীর দরজায়। তবে নমুনা সংগ্রহে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আলাদা দল। রোগী বহন
এমনকি নমুনা সংগ্রহ সবখানেই পুরোপরি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।
আরএআর/এমএস