ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কক্সবাজারে বেকার লক্ষাধিক, ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

সায়ীদ আলমগীর | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০৫:৩৯ পিএম, ১৮ জুন ২০২০

বাংলাদেশের অন্যান্য খাতের মতো পর্যটন খাতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস। গত তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পর্যটনসহ সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

বিশেষ করে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেমেছে ধস। গত তিন মাস পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে আছে পর্যটন এলাকাগুলো। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সামনে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে বাড়ছে ব্যাংক ঋণ। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা।

আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কক্সবাজারে প্রথম লকডাউনের ঘোষণা আসে ৮ এপ্রিল। এর আগে ১৮ মার্চ থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন বন্ধ করে দেয়া হয়। গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয় এখানে অবস্থানরত পর্যটকদের। ধীরে ধীরে জনশূন্য এলাকায় পরিণত হয় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকায় তিন মাস আয়-রোজগার শূন্যের কোটায়। কোটি কোটি টাকার আবাসন প্রতিষ্ঠান নিয়ে চরম বেকায়দায় রয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

jagonews24

তিনি বলেন, পর্যটন নগরীর অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। পর্যটনের সঙ্গে বার্মিজ, ঝিনুক, রেস্তোরাঁ, শুকনা খাবার, পান-সিগারেটসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় অর্ধশত ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নানা ধরনের পরিবহন যুক্ত। এসব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ব্যবসা বন্ধ থাকায় এরা সবাই বেকার হয়েছেন। এদের ঘরের চুলায় ঠিকমতো ভাতের হাঁড়ি ওঠে না। করোনার ক্রান্তিকাল কখন শেষ হয়; আর পঙ্গু অর্থনীতির গতি সচল হতে কতসময় লাগে তা একমাত্র আল্লাহ-ই জানেন।

কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পশ্চিমপাড়ে ২৫ ফিট বাই ১৫ ফিটের টিনের ঘর ১৮ হাজার টাকায় মাসিক ভাড়ায় ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট চালান জামাল নামে ময়মনসিংহের এক ব্যক্তি।

দু’বেলার জন্য ১০ জন কর্মচারী, চারজন বাবুর্চিসহ রেস্টুরেন্টের মাসিক খরচ প্রায় দেড় লাখ টাকা। ব্যবসা চালু থাকলে খরচ পুষিয়ে সংসারটা সুন্দরভাবে চলে তার। কিন্তু ২০ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও রেস্টুরেন্ট খোলা হয়নি তার। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার প্রয়োজন না পড়লেও ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ অর্ধলাখ টাকার মতো আসে। ব্যবসা বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ময়মনসিংহ চলে গেলেও গত তিন মাস ভাড়া ও অন্য ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ধারদেনায় পড়তে হয়েছে তাকে। এমনটি জানিয়েছেন জামাল ঘরোয়া রেস্টুরেন্টের পরিচালক জামাল হোসেন।

কক্সবাজার শহরের মৌসুমি ফল বিক্রেতা হারুন ও জহির। শিশুদের জামা ও নারীদের কাপড় ফেরি করতেন আলী আকবর। এসব ব্যবসায় চলতো তাদের সংসার। কিন্তু লকডাউনের কারণে এসব ব্যবসা তিন মাসেরও অধিক সময় বন্ধ। ফলে তাদের ব্যবসার মূলধন খাওয়া শেষ। এখন ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন তারা।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, প্রশাসনের শত চেষ্টার পরও কক্সবাজারে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যায়নি। দ্বিতীয় দফা লকডাউনে পর্যটনের আশার আলো শেষ। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন।

jagonews24

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, এত প্রচেষ্টার পরও কক্সবাজারে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যায়নি। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। করোনায় মারা গেছেন ২৮ জন। উপসর্গ নিয়েও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে কক্সবাজার শহরের ১০টি ওয়ার্ডকে পক্ষকালের জন্য ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ‘রেড জোন’ এলাকার বাসিন্দারা অন্য এলাকায় এবং অন্য এলাকার বাসিন্দারা ‘রেড জোনে’ যেতে পারছেন না। জেলার দ্বিতীয় করোনা প্রবণ এলাকা চকরিয়া পৌরসভা ও ডুলহাজারা ইউনিয়নের ২, ৩, ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড আংশিক ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। রেড জোন হিসেবে টেকনাফ ও উখিয়ার কয়েকটি স্থানে লকডাউন চলছে।

ডিসি কামাল হোসেন আরও বলেন, বন্ধ পর্যটনে অর্থনীতির চরম ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে আগে জান বাঁচানো ফরজ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যবসা কিভাবে গতিশীল করা যায় তা ভেবে দেখা হবে। অর্থনীতিতে আবারও সচলতা ফিরবে।

এএম/এমকেএইচ