ধলাই নদীতে প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন, হুমকির মুখে বাজার-বাড়িঘর
আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে অবস্থান পাল্টে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে আবারও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করেছে একটি চক্র। ফলে ওই অঞ্চলের পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা গেছে, ধলাই নদীর ঢালারপাড় এলাকায় প্রকাশ্যে ১৫ থেকে ২০টি পাথর তোলার যন্ত্র (ছোট লিস্টার ও বোমা মেশিন) চলছে। দিনে ও রাতে ৫০০ থেকে ৬০০টি ছোট ছোট বারকি নৌকা দিয়ে চলছে পাথর তোলার কাজ। অবাধে পাথর তোলার ফলে নদীর পাড় ভেঙে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া নতুন করে বিলীন হওয়ার পথে কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের মুস্তফা নগর, দক্ষিণ ঢালারপাড়, উত্তর ঢালারপাড়, রাজনগর, ইসলামপুর বাজার, নয়া গাঙ্গের পাড়সহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২-৩ মাস ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, বোমা ও লিস্টার মেশিন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেলেও ঢালার পাড় এলাকায় প্রকাশ্যে লিস্টার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রহস্যজনক। স্থানীয়রা লিস্টার ও বোমা মেশিন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নিলেও একটি চক্র ছোট লিস্টার ও বোমা মেশিনকে বৈধ এবং এগুলোর মাধ্যমে পাথর উত্তোলন ‘সনাতন পদ্ধতি’ দাবি করে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করছে।
বিদ্যমান খনি ও খনিজসম্পদ বিধিমালায় বলা আছে, ভূমি থেকে পাঁচ মিটার বা ১৬ দশমিক ৪০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত কোয়ারিতে পাথর তোলা যাবে শুধু অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে। অযান্ত্রিকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, পরিবেশসম্মত যন্ত্রপাতি যেমন- দা, কোদাল, শাবল, বেলচা ও খন্তা। পাঁচ মিটারের বেশি গভীরতা হলে সেটা আর কোয়ারি থাকে না। সেটা হয় খনি। খনি কিংবা কোয়ারি থেকে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বা বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তোলা নিষিদ্ধ।
স্থানীয়রা জানান, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোনো উপায়ে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঢালারপাড় কোয়ারি না হওয়ায় সেখান থেকে লিস্টার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ছাড়া কিছুই নয়।
সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারিতে বোমা মেশিনে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে হাইকোর্টে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে দুটি রিট আবেদন করা হলে ২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে রায় দেন আদালত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা বলেন, আদালতের রায়ে মেশিন নিষিদ্ধ হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে যেকোনোভাবেই পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোয়ারি এলাকার বাইরে হাত দিয়েও একটি পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। সেখানে কোনোভাবেই পাথর উত্তোলনের সুযোগ নেই। এটাকে পাথর চুরি না বলে পাথর ডাকাতি বলা যায়।
এখানে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপারগতা বলতে কিছু নেই। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেয়ার আহ্বান জানান শাহ শাহেদা।
প্রকাশ্যে লিস্টার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) রজি উল্লাহ বলেন, লিস্টার চলার ব্যাপারটি শুনেছি। আপনারা ধরেন না কেন? ধরে আমাদের খবর দেন। দেখেন আমি কী করি?’
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য বলেন, আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছামির মাহমুদ/এমএআর/পিআর