ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দেশ ছাড়ছে ইন্দুরকানী গ্রামের মানুষ

জেলা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৫

জেসমিনের চড়া সুদের খপ্পরে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার ইন্দুরকানী গ্রামের অসংখ্য মানুষ। সুদের টাকা দিতে না পেরে অনেকে এই নারীর ভয়ে ইতোমধ্যে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকে পালিয়েছে দেশ ছেড়েও। তবে জেসমিনের এই নীরব অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সম্প্রতি সোচ্চার হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানয়েছেন ভুক্তভোগি, ব্যবসায়ী ও সচেতন নাগরিক সমাজ।

জেসমিন (৪২) জিয়ানগর উপজেলার সুদ ব্যবসায়ী ইন্দুরকানী গ্রামের বজলুর রহমানের মেয়ে।

জানা যায়, জেসমিন দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে চড়া সুদে টাকা দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। দিন যত বাড়ে তার সুদের টাকা ততই বাড়ে। তার মূল লক্ষ্য অভাব অনটনে থাকা মানুষগুলো সুদের উপর টাকা দিয়ে তার বাড়ি দখল করা। তার এই খপ্পড়ে সবচেয়ে বেশি পড়েছে উপজেলার অনেক সহজ সরল হিন্দু। সুদের উপর টাকা নেয়ার পর প্রথম কিছুদিন নিয়মিত টাকা পরিশোধ করলেও পরে আর টাকা দিতে পারতো না তারা। এরপরই চলতো এসব নিরীহ মানুষের উপর জেসমিনের নীরব অত্যাচার। আর এই অত্যাচারের ভয়ে অনেক হিন্দু পরিবার ইতোমধ্যে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে অন্য জেলায়।

pirojpur-home
সরেজমিনের এলাকায় গিয়ে জানা গেছে জেসমিনের এই সুদের টাকা দিতে না পারায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আষিম হালদার, ঊষারানী শিল, শমির সাহা, হালিম মাওলানা, শ্যামল ও শেফালী বেগম নিঃস্ব হয়ে ভারতে চলে গেছেন। আর পথে বসেছেন প্রায় দুইশ পরিবার।

এছাড়াও নিঃস্ব হওয়ার পথে ইন্দুরকানী বাজারের ব্যবসায়ী সঞ্জিব বালা, মিজান, এমাদুল, বিধানসহ আরো অনেকে।

সুদের অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় ইতোমধ্যে জিয়ানগর উপজেলার চাড়াখালী গ্রামের ঊষারানী ও কার্তিক শীল নামে এক সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িটি জেসমিন দখল করে নেন।

জেসমিনের কাছে সুদে টাকা নেওয়া বৈরাগী (৪২) জানান, ৬০ হাজার টাকার বিপরীতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করলেও গত বৃহস্পতিবার আরো ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করলে এনিয়ে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

একই গ্রামের জিল­ুর রহমান (৩৫) জানান, ১০ হাজার টাকায় সপ্তাহে ১ হাজার করে নিয়ে তা পরিশোধ করলেও অপমান করে পুনরায় এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও আট আনা ওজনের কানের দুল নিয়েছে আমার কাছ থেকে।

ইন্দুরকানী বাজারের মুচি রাম কৃষ্ণ (৫১) জানান,  প্রায় দেড় বছর আগে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য জেসমিনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রতিদিন পাঁচশত টাকা সুদ দেয়ার কথা বলে গ্রহণ করি। এভাবে তার সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী তার কাছ থেকে টাকা সুদে নিয়ে আজ পথে বসেছেন।

projpur-home
এমাদুল তালুকদার (৪৮) জানান, ৬ বছর আগে এক লাখ টাকার বিপরীকে ৩০ লাখ টাকা নিলেও পুনরায় এক লাখ টাকা পায় বলে জেসমিন দাবি করেন।

মিজান হাওলাদার (৩০) জানান, এক লাখ টাকা ৬ বছর আগে নিলে ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। তার পরেও জেসমিন জায়গা জমি লিখে নেয় কৌশলে।

আঃ লতিফ হাওলাদার (৫৫) জানান, দুই বছর আগে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ৩০ হাজার টাকা দিলেও দুইমাস টাকা দিতে না পারায় ৮০ হাজার টাকা দাবি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ কাঠা জমি লিখে নিয়েছে জেসমিন।

ইন্দুরকানী বাজারের ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ জানান, জেসমিনকে তার মূল নামে এই বাজারের খুব কম মানুষ চেনে। তাকে সবাই মোনষা নামে আক্ষায়িত করেছেন। তিনি চড়া সুদে টাকা দিয়ে টাকা আদায় করার সময় খুব খারাপ আচরণ করেন। এমনকি পুরুষ লোকদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা বোধ করেন না জেসমিন।

ইন্দুরকানী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আঃ ছত্তার হাওলাদার জানান, জেসমিনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে মানুষ মরেও রেহাই পায় নাই। গাব গাছিয়া গ্রামের আঃ ছোবাহান নামের এক লোক তার সুদের টাকা পরিশোধ না করেই মারা যায়। ছোবাহানের লাশ দাফনের পূর্বে সেখানে জেসমিন উপস্থিত হয়ে তার সুদের টাকা পরিশোধ করে লাশ দাফনের দাবি জানান। পরে তার টাকা শোধ করেই লাশ দাফন করা হয়।

এভাবে জেসমিন রামচন্দ্রপুর গ্রামের কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে দেশ ছাড়া করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জেসমিন দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে চড়া সুদে টাকা দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। এসব ঘটনায় হত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে জিয়ানগর থানায় জেসমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দেবীপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান নামে ভুক্তভোগি।

মামলায় জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেন, তার জমাকৃত ৬ ভরি স্বর্ণালংকার জেসমিন ফেরত না দিয়ে তাকে হুমকি দেয় এবং সুদের আরো টাকা পাবে বলে জমাকৃত মালামাল ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। এর আগে সুদখোর জেসমিন সুদের টাকা আদায় করতে গিয়ে এনজিও কর্মী বিধান চন্দ্র বৈরাগীকে লাঞ্ছিত করেন।

এ ঘটনায় ইন্দুকানী থানা পুলিশ জেসমিনকে আটক করলেও জামিনে এসে আবারো সেই সুদের ব্যবসায় মেতে উঠেছেন।

এ ব্যাপারে জেসমিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এমএএস/আরআইপি