ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ওষুধ-স্যালাইন আছে, নেই ডাক্তার

প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৫

জয়পুরহাটে চিকিৎসকের অভাবে ২০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ হতে চলেছে। সেবার মান ভালাে থাকায় ১৯৭৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কেন্দ্রটি জেলার হাজার হাজার মা ও শিশু উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতেন। এ কেন্দ্রে প্রতিমাসে প্রায় তিন হাজার প্রসূতি মায়ের চেকআপ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো এবং প্রায় একশ মায়ের নরমাল প্রসব ও পঞ্চাশজন গর্ভবতী মায়ের সিজার করা হতো।

এছাড়াও শুন্য থেকে পাঁচ বছরের ৬শ শিশুর স্বাস্থ্য সেবাও মিলতো এই কেন্দ্র থেকে। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে গাইনি চিকিৎসক ও ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট থেকে অজ্ঞান চিকিৎসক না থাকায় গত ২১ মাস যাবৎ অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ঘুরে গিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অসহায় ও গরীব রোগীরা প্রসবকালীন অপারেশন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এরই মধ্যে সূর্যের হাসি ও মেরি স্টোপ নামে অপারেশন অনুমোদনহীন ক্লিনিকে গিয়ে প্রতারিত হয়ে ক্লিনিকের চিকিৎসা অবহেলায় মারা গেছেন যথাক্রমে পাঁচবিবি উপজেলার নন্দীগ্রামের দীনেশ দাসের নবজাতক সন্তান ও পাঁচবিবি উপজেলার শিথামণ্ডু গ্রামের শারমিন আখতার নামের এক মা।

এদিকে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সদর উপজেলা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক দিয়ে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার প্রসূতি মা`দের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সোহানা আসকারী সৃষ্টি বলেন, এখানে সপ্তাহে দুইদিন গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ করা হলেও জটিল প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলেই জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়।

joypur
এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের মুমূর্ষু রোগীদের বহনকৃত একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও বিকল হয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ গ্যারেজবন্দি হয়ে পড়ে আছে। অপারেশন না হওয়ায় কেন্দ্রে বর্তমানে প্রচুর ওষুধ ও স্যালাইন মজুদ আছে।

জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ফার্মাসিস্ট, ফিমেল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট, সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট ও দাই নার্সসহ সবগুলো পদ পূর্ণ থাকলেও গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারিতে গাইনি চিকিৎসক ডা. নাহিদা নাজনিন ও একই বছরের ১৪ আগস্ট অজ্ঞান চিকিৎসক ডা. তাহমিদুর রহমান বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর থেকে দুটি পদই খালি হয়।

পরবর্তীতে বগুড়া সদরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে অজ্ঞান চিকিৎসক ডা. আব্দুল মান্নান মিয়া ও নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে গাইনি চিকিৎসক ডা. জাহেদুল ইসলামকে জয়পুরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বদলি করা হলেও তারা যোগদান না করায় দুটি পদই খালি আছে।

বুধবার মাতৃত্বকালীন সেবা নিতে আসা আক্কেলপুর উপজেলার রুকন্দিপুর গ্রামের গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা ও পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ রোখসানা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্রে তাদের প্রথম ছেলে সন্তান বিনামূল্যে সিজার করেছিলেন কিন্ত বর্তমানে চিকিৎসক না থাকায় চিন্তায় পড়ে গেছেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা খালেদা খানম জাগো নিউজকে জানান, আগে প্রতিদিন এখানে ৮০-৯০ জন গর্ভবতী মা সেবা নিতে আসতেন, এখন চিকিৎসকের অভাবে প্রসবকালীন অপারেশন বন্ধ থাকায় রোগীদের ভীড়ও কমে গেছে। শুধু নার্সদের উপর ভরসা করে এখন কেউ প্রসবকালীন সেবা নিতে আসতে চান না।

মা ও শিশু কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, চিকিৎসক না থাকায় আমার ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকায় আমি বর্তমানে শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি। জটিল চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. আবু নছর নূরুল ইসলাম চৌধুরী চিকিৎসকের অভাবে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, গর্ভকালীন চেকআপের জন্য সাময়িকভাবে একজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুদিন চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডাক্তার নিয়োগের চেষ্টা চলছে, নিয়োগ হলেই এ সমস্যা আর থাকবে না।   

রাশেদুজ্জামান/এমজেড/আরআইপি