ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

অর্থ সংকটে সারাদিন অন্য কাজ, রাতে পড়ে গোল্ডেন এ প্লাস

সালমান শাকিল | রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, ০২ জুন ২০২০

ক্লাস সেভেন পেরিয়ে এইটে উঠলেও স্কুলের বেতন দিতে পারতেন না বাবা। এর সঙ্গে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা। ঘরে চাল থাকতো না অধিকাংশ সময়। বাবার উপার্জন নেই। এ রকম ডজনখানেক সমস্যা যখন সামনে তখন পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়ার ইচ্ছা করেছিল মোজাহিদ।

কিন্তু জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, সঙ্গে বৃত্তি পেল সে। তাই কষ্ট হলেও তখন সে পড়ালেখা ছাড়েনি। শত কষ্ট সহ্য করেও পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। সেই কষ্ট আর চেষ্টার ফল পেয়েছে মোজাহিদ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার সায়েড়া মধুদিয়া কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী মোজাহিদ। সায়েন্স বিভাগ থেকে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। এতে খুশিতে আত্মহারা মোজাহিদ ও তার পরিবার।

মোজাহিদ সবকটি বিষয়ে এ প্লাস পেয়ে মোট নম্বর পেয়েছে ১০০৪। স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর তার। এছাড়াও আরও ছয়জন ওই স্কুল থেকে এ প্লাস পেয়েছে।

মোজাহিদ জানায়, এই অর্জনে কম বেগ পেতে হয়নি তাকে। স্কুল থেকে ফিরে পড়ার জন্য খুব কম সময় পেয়েছে সে। বাবার সুতা পাকানোর কাজ, কখনও আর্থিক অনটনে পরের বাড়িতে ধান লাগানো, কাটা বা মাড়াই করা, কখনও দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে হয়েছে তাকে। এরই মাঝে লেখাপড়া করেছে।

মোজাহিদ আরও জানায়, তার বন্ধুরা যখন নতুন নতুন স্কুল ড্রেস পড়ে স্কুলে আসতো। কিন্তু নতুন পোশাক কিনে দেয়ার সামর্থ্য ছিল না তার বাবার। অন্যদের বাবা-মা পকেট খরচ দিত, তবে তার বাবা-মা পারতো না। কান্না এসেছে অনেক। তবে এসএসসির ফলাফলে সেসব কষ্ট ধুয়ে গেছে।

স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোজাহিদ জানায়, শিক্ষকরা তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। এছাড়াও প্রাইভেট শিক্ষক মিজানুর রহমান তাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।

সুপারি কাটার কাজ করেন মোজাহিদের মা বিউটি বেগম। ছেলের এমন অর্জনের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, সুতার কাজের জন্য অনেক সময় প্রাইভেট পড়তে, স্কুলে যেতে পারেনি মোজাহিদ ৷ মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কাজ করতে যেত। ও অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। ইচ্ছা আছে ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে হয়তো সেটি সম্ভব হবে না।

মোজাহিদের বাবা মল্লিক দেলওয়ার হোসেন জানান, স্কুল শেষেই কাজে সময় দিতো। দিনের অধিকাংশ সময় কাটতো কাজে। তবে রাতের বেলা পড়তো মোজাহিদ। একবার যেটা নিয়ে বসতো সেটি শেষ না করে উঠতে চাইতো না। এমনও হয়েছে দিনের বেলা কাজ করেছে আর সারা রাত পড়েছে। প্রতিবেশীরা বলতেন ছেলেটা পাগল হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা আছে তবুও তাকে বলেছি তুমি পড়ালেখা চালিয়ে যাও। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তৈরির স্বপ্ন দেখেন তিনি।

এখন বাবা-মা ও মোজাহিদ চিন্তিত ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে। এমন অর্থনৈতিক দৈন্যতায় ছেলেকে ভালো কলেজে ভর্তি করানো ও খরচ বহন নিয়ে চিন্তিত তার বাবা-মা।

আরএআর/জেআইএম