ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

এসএসসিতে সন্তোষজনক ফল না পেয়ে দুই কিশোর ও ৭ কিশোরীর আত্মহত্যা

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:৩০ পিএম, ৩১ মে ২০২০

এসএসসি পরীক্ষায় ফেল ও জিপিএ-৫ না পাওয়ায় শরীয়তপুরে এক কিশোরী, ঝিনাইদহে কিশোর, শায়েস্তাগঞ্জে কিশোরী, শ্রীপুরে কিশোরী, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে এক কিশোরী, লালমনিরহাটে এক কিশোরী, দিনাজপুরে এক কিশোরী, জয়পুরহাটে এক কিশোর ও মাগুরায় এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। বিস্তারিত জাগো নিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো খববে-

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, জলোর গোসাইরহাট উপজেলায় মোছাদিমা রহমান বর্ষা (১৭) নামে এক কিশোরী জিপিএ-৫ না পেয়ে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে

রোববার (৩১ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার গোসাইরহাট ইউনিয়নের বটনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মোছাদিমা রহমান বর্ষা উপজেলার গোসাইরহাট ইউনিয়নের বটনা গ্রামের আব্দুল মতিন সরকারের মেয়ে। সে ইদিলপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ- ৪.৫০ পেয়েছে। এরপরও জিপিএ-৫ না পেয়ে আত্মহত্যা করল বর্ষা।

ইদিলপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, বর্ষা পড়ালেখায় বেশ ভালো ছিল। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে। রোববার প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে দেখা যায়, বর্ষা তিনটি বিষয়ে ৭৮ নম্বর পায়। আর সবগুলো বিষয়ে ৮০ ওপর নম্বর পেয়েছে। অল্পের জন্য জিপিএ-৫ পায়নি সে। তারপরও আত্মহত্যা করেছে সে।

গোসাইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোহেব আলী বলেন, বেলা পৌনে ১১টার দিকে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেছে বর্ষা। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি বর্ষা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়নি। এ কারণে সে আত্মহত্যা করেছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, জেলার মহেশপুর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় ‘সি’ গ্রেড পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছে পিয়ারুল ইসলাম (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী।

রোববার (৩১মে) দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই গ্রামের ঝন্টু মন্ডলের ছেলে এবং স্থানীয় খালিশপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিল। আগে এই শিক্ষার্থী স্কুলের এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় ৫টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল।

মহেশপুর থানা পুলিশে র ওসি (তদন্ত) রাশেদুল আলম জানান, পিয়ারুল ইসলাম যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে খালিশপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। ফলাফল প্রকাশের পর সে জানতে পারে ‘সি’ গ্রেড (২.৭৮) পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে। এরপর সে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী মেহগনি বাগানের গাছে তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। ওই সময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহটি উদ্ধার করে।

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, জেলার লাখাই উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় মণি আক্তার (১৮) নামে এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। রোববার (৩১ মে) দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মণি আক্তার লাখাই উপজেলার বেগুনাই গ্রামের জামাল মিয়ার মেয়ে। সে মাদনা এসইএসডি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

পারিবারি সূত্রে জানা যায়, সকালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ফলাফল দেখার পর মণি ফেল করায় রাগে ও অপমানে বিষপান করে। পরে বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলে পরিবারের লোকজন বুঝতে পেরে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মণিকে মৃত ঘোষণা করেন।

লাখাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মানছুরা (১৬) নামের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। নিহত মানছুরা সৌদি প্রবাসী হান্নান মিয়ার মেয়ে।

রোববার বেলা ১২টার দিকে নিজ ঘরে ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে। মানছুরা ওই গ্রামের হান্নান মিয়ার মেয়ে।

স্বজনদের বরাত দিয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলাউদ্দিন জানান, মানছুরা লতিফপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

রোববার ঘোষিত ফলাফলে মানছুরা অকৃতকার্য হয়। এরপর ফল ঘোষণার পরপরই সে তার ঘরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এসময় তার মা মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ফিরে ঘরে মেয়ের লাশ ঝুলতে দেখে তিনি চিৎকার শুরু করেন।পরে এলাকাবাসী লাশ উদ্ধার করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করে। পরে স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, জেলার হরিপুর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে রোববার দুপুরে লিমা আক্তার (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। হরিপুর থানা পুলিশের ওসি মো. আমিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সে ওই ইউনিয়নের তিনুয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে এবং হরিপুর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কবিরুল ইসলাম জানান, দুপুরে একজন শিক্ষার্থী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আরেক শিক্ষার্থী কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়।

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, এসএসসি পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে খারাপ করায় এসএসসি পরীক্ষায় পাস হয়নি লিমার। এ কারণে সে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

লিমার বাবা জহিরুল ইসলাম জানান, সকালে থেকে আমি ও আমার স্ত্রী মাঠে ধান কাটছিলাম। দুপুরে বাড়িতে এসে দেখি মেয়ে ফাঁস দিয়েছে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ফেল করায় একই ইউনিয়নের বালিহাড়া গ্রামের আরেক শিক্ষার্থী কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।তাকে উদ্ধার করে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠায়।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় পর পর দুইবার এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় লাইজু আক্তার (১৭) নামের এক কিশোরী কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছে।

রোববার (৩১ মে) বিকেল সাড়ে ৫টায় হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়। এর আগে দুপুরে উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের উত্তর পারুলীয়ায় ২নং ওয়ার্ডের নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করেন লাইজু।

সে ওই এলাকার জিল হকের মেয়ে। লাইজু পারুলিয়া তফসিলী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে ২০১৯ ও ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, রোববার সকালে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার খবরে লাইজু আক্তার আবারও ফেল করার খবর পেয়ে বাড়িতে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয় হাতীবান্ধা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে পাতা রায় (১৬) নামে এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।

সে চিরিরবন্দর উপজেলার ৭নং আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের ভাদ্রা গ্রামের দিলিপ রায়ের মেয়ে। সে শাশরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রোববার ঘোষিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাতা রায় তার রোল নম্বর খুঁজে পায়নি। অকৃতকার্য হওয়ায় সন্ধ্যায় সকলের অজান্তে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

চিরিরবন্দর থানা পুলিশের ওসি সুব্রত সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, গণিতে ফেল করায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল দস্তপুর গ্রামে আবু সাঈদ (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

আবু সাঈদ পুরানাপৈল দস্তপুর গ্রামের সরোয়ার হোসেনের ছেলে এবং শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্র।

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হবার পর উত্তীর্ণ হতে না পেরে অভিমান করে বাড়ির সবার অগোচরে কীটনাশক খায়। এক পর্যায়ে বিষয়টি পরিবারের লোকজন বুঝতে পেরে তাকে দ্রুত জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।

শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান বলেন, সাঈদ আমাকে মোবাইল করে বলে স্যার আমার রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু জিপিএ আসছে পয়েন্ট আসছে না, তখন আমি তাকে বলি রেজাল্ট আমি তোমাকে জানাচ্ছি, পরে শুনি এ ঘটনা, শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।

জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মাগুরা প্রতিনিধি জানান, জেলার মহম্মদপুরে দাখিল পরীক্ষায় ফেল করায় আইরিন (১৬) নামে এক মাদরাসাছাত্রী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (৩১ মে) রাতে উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের পারভার্টপড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আইরিন বিনোদপুর ইউনিয়নের পারভার্টপড়া গ্রামের জিহাদ হোসেনের মেয়ে।

বিনোদপুর ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার বিলায়েত হোসেন বলেন, আইরিন বিনোদপুর ইউনিয়নের বানিয়াবহু দাখিল মাদরাসায় লেখাপড়া করত। বানিয়াবহু দাখিল মাদরাসা থেকে এ বছর সে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। রোববার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় সে ফেল করেছে। ফলে রাতে বাড়িতে বাবা-মা না থাকার সুযোগে মনের কষ্টে আইরিন ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

মহম্মদপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারক বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এমএএস/এমকেএইচ