ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শোলাকিয়ায় এমন নির্জনতা আগে দেখেনি কেউ

নূর মোহাম্মদ | কিশোরগঞ্জ | প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ২৫ মে ২০২০

এ যেন অবিশ্বাস্য! পৌনে তিনশ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঈদের দিনে নির্জনতা দেখাল উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান! এমন নির্জনতা কেউ দেখেনি আগে।

লাখো মানুষের পদচারণায় মুখর থাকার কথা ছিল এ ময়দান। ঈদের দিন ভোর থেকে বিশালায়তনের এ ঈদগাহ ঘিরে চোখে পড়ত প্রশাসনের প্রস্তুতি যজ্ঞ! ঈদের আগের দিন থেকে দেশে-বিদেশের মুসল্লিদের মাঠে অবস্থান ও রাত্রিযাপন ছিল স্বাধারণ দৃশ্য। তবে এবারের ঈদে ইতিহাসের নতুন সাক্ষী হয়ে থাকল শোলাকিয়া!

Sholakia-(8).jpg

মহামারি করোনা বদলে দিয়েছে ২৭০ বছরের ইতিহাস। এই প্রথমবারের মতো নির্জনতা নিয়ে একটি ঈদের সকাল পার করল শোলাকিয়া। করোনা মহামারি বদলে দিয়েছে শোলাকিয়ার শতশত বছরের ঐতিহ্য। যুগের পর যুগ নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাক কেটেছে। তবে বন্ধ হয়নি শোলাকিয়া মাঠের ঈদের জামাত। এমনকি জামাত শুরুর আগে ইতিহাসের বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার সময়েও হয়েছে ঈদের জামাত। একদিকে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের নামাজ। তবে এসব এখন ইতিহাস।

Sholakia-(8).jpg

বাস্তবতা হচ্ছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির জন্য এবারই প্রথম শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত হয়নি। ঈদ ঘিরে ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশে ছিল না সংস্কার আর শোভাবর্ধনের চাকচিক্য। বরং নিরানন্দ আর মলিনতা নিয়েই একটি ঈদুল ফিতর পার করল শোলাকিয়া। বিশাল এ প্রান্তরের সবুজ ঘাসে যেন বেদনার অশ্রুর মতোই জমে ছিল ভোরের জলকণা!

Sholakia-(8).jpg

আর শোলাকিয়ায় জামাত না হওয়ায় কিশোরগঞ্জ যেন এক অচেনা-অজানা এক জনপদ। সাধারণত ঈদের দিন ভোর ধেকে সারা শহর থাকত হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িবহরের ইমার্জেন্সি হুইসেল, ট্রাফিক পুলিশের ঘামঝরা অবস্থান আর দেশ-বিদেশের সংবাদকর্মীদের কর্মব্যস্ততা ছিল ঈদের সকালের চিরচেনা দৃশ্য।

শোলাকিয়া ঈদগাহে এবার ছিল ১৯৩তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি কিশোরগঞ্জে যোগদানের পর থেকে সভাপতি হিসেবে চারটি ঈদের জামাত পেয়েছি। এবারই প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে একটা শূন্যতা। ঈদের দিনে শোলাকিয়া নীরব থাকবে, শহর থাকবে নির্জন-এর আগে কোনোদিন এমনটা মনেই হয়নি।’ তিনি জানান, লোক সমাগত এড়াতে মাঠের সবকটি গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এমনকি শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের মসজিদটিও তালা দিয়ে রাখা হয়। তবে এমন আধার দ্রুত কাটকে বলে মনে করেন তিনি।

Sholakia-(8).jpg

১৯২ বছর আগে শোলাকিয়ায় ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরও দুশো বছর আগে থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশের তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি একসঙ্গে শোলাকিয়ার বিশাল প্রান্তরে নামাজ পড়েন। এখানে একটি মাত্র জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল প্রান্তরে সব মুসল্লি যাতে নামাজ শুরুর মুহূর্তটি জানতে পারেন, সেজন্য নামাজ শুরুর আগে বেশ কয়েকবার বন্দুকের গুলি ছোড়া হয়। সব শেষে জামাত শুরুর এক মিনিট আগে গুলি ছুড়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি ঘোষণা করা হয়।

লাখো মুসল্লির নিরাপত্তায় নেয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকে মাঠের চারপাশে। জামাত ঘিরে পুরো শহর যানবাহনশূন্য করে সাজানো হয় ট্রাফিক ব্যবস্থা। আকাশে নজরদারি করে উন্নত ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন। দূরের মুসল্লিদের জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার থেকে চলাচল করে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। তবে এবার সব আয়োজন থামিয়ে দেয় অদৃশ্য করোনা।

Sholakia-(8).jpg

বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপশালী বীর ঈশা খাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ্ করেন। তারও দুশো বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে উল্লেখ আছে ওই ওয়াকফ দলিলে। ১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।

Sholakia-(8).jpg

২০১৬ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। ওই হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন বেশ কয়েকজন। তবু থেমে থাকেনি ঈদের জামাত। তবে এই প্রথমবারের মতো ঈদের দিনেও নীরব থাকছে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া।

নূর মোহাম্মদ/এসআর/এমএস