সন্তানদের সঙ্গে থেকেই করোনাযুদ্ধে চিকিৎসক দম্পতি
তিন বছর বয়সী সুমাইলা ইবরাতের সার্বক্ষণিক সঙ্গী এখন বড়ভাই পাঁচ বছর বয়সী ইসমাইল ইসমাম। তাদের বাবা ডা. আবু ইউসুফ ও মা ডা. শামীমা নাসরিন। এই চিকিৎসক দম্পতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। দুজনই সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে লড়ছেন করোনাযুদ্ধে।
কিন্তু শিশু সন্তানদের জন্য তারা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে যেতে পারেননি। দিন শেষে ফিরতে হচ্ছে বাসায়। এ কারণে পুরো পরিবারই করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবুও চিকিৎসাসেবা থেকে দূরে সরে যাননি এই চিকিৎসক দম্পতি।
রামেক হাসপাতাল সংলগ্ন সেপাইপাড়া এলাকায় এই চিকিৎসক দম্পতির বসবাস। তাদের স্থায়ী নিবাস ঢাকার ডেমরায়।
ডা. আবু ইউসুফ জানান, বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। তিনি বাবা-মাকে এনে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকার করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ, এ জন্য আর আনতে পারেননি। আয়া এখন একমাত্র ভরসা। ফলে দিন শেষে তাদের যে কাউকে বাসায় ফিরতেই হচ্ছে।
ডা. আবু ইউসুফ এখন দায়িত্ব পালন করছেন রামেক হাসপাতালের করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড ৪৯-৪০ নম্বরে। রামেক হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় আলাদা ওয়ার্ড চালুর পর গত ২৫ মার্চ থেকে সেখানে যোগ দেন তিনি।
অন্যদিকে করোনার নমুনা পরীক্ষায় রামেকে করোনা ল্যাব চালুর পর থেকেই গবেষক হিসেবে সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডা. শামীমা নাসরিন। সম্প্রতি তিনি রামেক হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন।
আগামী ২৬ মে থেকে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করবেন ডা. শামীমা নাসরিন। ঈদেও তার ছুটি নেই। সেখানে টানা ১০ দিন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় অংশ নেবেন। এরপর ১৪ দিন চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত পর্যটন মোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এরপর ছয়দিন পারিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন। ওই সময়টা বাচ্চাদের দেখভালের পুরো দায়িত্ব ডা. আবু ইউসুফের।
ডা. আবু ইউসুফ আরও জানান, গত ১১ এপ্রিল তিনি রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালে যোগ দেন। শুরুর দিকে করোনা শনাক্ত হয়নি কারোরই। ফলে বাসায় ফিরে মোটামুটি আলাদা থাকতেন। ওই সময়টা বাচ্চাদের সঙ্গেও সময় কাটাতেন। কিন্তু ১৯ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত এক রোগী আসেন আইডি হাসপাতালে। তার সরাসরি সংস্পর্শে আসেন তিনি। এরপর থেকেই বাসায় ফিরে তিনি একেবারেই আইসোলেশনে থাকতেন। বাচ্চাদের সঙ্গেও মিশতেন না।
গত ২৬ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইডি হাসপাতালে মারা যান ওই রোগী। এরপর আইডি হাসপাতালে আর করোনা রোগী ভর্তি করেনি কর্তৃপক্ষ। মাঝে দুই দফা নমুনা পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের। কয়েকদিন বিরতির পর আবারও করোনা চিকিৎসায় রামেক হাসপাতলে ফেরেন ডা. আবু ইউসুফ।
তিনি বলেন, বাসায় ফেরা মাত্রই সচরাচর বাচ্চারা প্রথমেই জড়িয়ে ধরে। কিন্তু আইসোলেশনের দিনগুলোতে আমি একেবারেই আলাদা থাকার চেষ্টা করেছি। সারাক্ষণ বাচ্চারা দরজার সামনে বসে অপেক্ষা করতো। দরজা খুলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টাও করতো। মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতো, ভাইরাস চলে গেছে কি-না?
আরএআর/এমএস