ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মানবতার পরশ বুলাচ্ছে ফেসবুকভিত্তিক সংগঠনগুলো

আজিজুল সঞ্চয় | ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ২৪ মে ২০২০

কোভিড-১৯ নামক অদৃশ্য এক ভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে সারাবিশ্বের মানুষ। গত মার্চ মাসের প্রথম দিক থেকে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। কর্ম হারিয়ে মানবেতর দিন কাটছে বহু মানুষের। ভাইরাসটির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো।

jagonews24

করোনার এ বৈশ্বিক দুর্যোগেও সরকারের পাশাপাশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যক্তি ও নানা সংগঠন। মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের সাধ্যমতো সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফেসবুকভিত্তিক সংগঠনগুলো। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহারসহ নগদ অর্থও দেয়া হচ্ছে কর্মহীন, হতদরিদ্র ও অসহায়দের।

করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফেসবুকভিত্তিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘বাউনবাইরার কতা’, ‘ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া’, ‘ব্লাড ফর আশুগঞ্জ’, ‘আশ্রয় বিদ্যাপিঠ’ ও ‘টুগেদার ফর ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংগঠনসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের কর্মতৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এ সংগঠনগুলোর সদস্যরা দফায় দফায় খাদ্য সহায়তা, ঈদ সামগ্রী ও নগদ অর্থ পৌঁছে দিচ্ছে কর্মহীন, হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারগুলোর কাছে।

egg

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক ভাষাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে ‘প্রাণের ভাষায়, নতুন আশায়’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা করে বাউনবাইরার কতা সংগঠন। দেশের বাইরেও এ সংগঠনের অসংখ্য সদস্য-ফলোয়ার রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় ও পরিচ্ছন্ন ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে সংগঠনটি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জনকল্যাণমুখী নানা কর্মকাণ্ড করে থাকে ‘বাউনবাইরার কতা’।

কোনো সংস্থা কিংবা ব্যক্তির সহযোগিতা না নিয়ে সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের চাঁদা ও যাকাতের টাকায় অসহায় ও হতদরিদ্রদের জন্য কাজ করছে। প্রতি বছরই প্রবীণদের পাশে থাকার পাশাপাশি ‘প্রজেক্ট স্বাবলম্বী’র মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারকে অটোরিকশা, সেলাই মেশিন, মুদি দোকান তৈরি করে দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলে। এবার প্রজেক্ট স্বাবলম্বীর বদলে করোনা দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি।

jagonews24

‘আহার’ প্রজেক্টের মাধ্যমে গত এপ্রিল এবং চলতি মে মাসে তিন দফায় ৮২৫টি কর্মহীন, হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে ‘বাউনবাইরার কতা’। উপকারভোগীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সংগঠনটির সদস্যরা খাদ্য সহায়তার প্যাকেট পৌঁছে দিয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ মে দেয়া খাদ্য সামগ্রীর সঙ্গে নগদ অর্থও দিয়েছে সংগঠনটি।

‘ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংগঠনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখার লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু দুর্যোগের এ সময়েও মানবতার হাত প্রসারিত করেছে সংগঠনটি। পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন ইফাতারের আগমুহূর্তে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ছিন্নমূল মানুষদের ইফতার করিয়েছে সংগঠনটি। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এ সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের চাঁদার টাকা দিয়েই পুরো রোজার মাস প্রতিদিন প্রায় দুইশ জনকে ইফতার করিয়েছে।

egg

‘ব্লাড ফর আশুগঞ্জ’ সংগঠনটি জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় কাজ করে থাকে। মূলত স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়াই সংগঠনটির কাজ। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের বেশ কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষের জন্য তারা আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করে। এছাড়া লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাদের কথা চিন্তা করে প্রতিদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ টোলপ্লাজায় দুইশ রোজাদারকে ইফতার করিয়েছে সংগঠনটি।

সর্বশেষ গতকাল শনিবার (২৩ মে) ফ্রি ঈদ বাজারের আওতায় তিনশ মানুষকে নিজেদের পছন্দমতো ঈদের খাদ্য সামগ্রী নেয়ার সুযোগ দেয় ‘ব্লাড ফর আশুগঞ্জ’।

jagonews24

‘টুগেদার ফর ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ সংগঠনটির সদস্যরা নিজেদের আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও করোনা দুর্গতদের পাশা দাঁড়িয়েছে। গতকাল শনিবার (২৩ মে) বিকেলে শতাধিক পরিবারের মাঝে ঈদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে সংগঠনটি।

‘আশ্রয় বিদ্যাপিঠ’ জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার একটি ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন। করোনা দুর্যোগে মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্রদের জন্য পাঁচ টাকার সবজি বাজার কার্যক্রম চালু করে। প্রতিদিন আশুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতি কেজি পাঁচ টাকা দরে ৯শ কেজি সবজি বিক্রি করে সংগঠনের সদস্যরা। মূলত চক্ষুলজ্জার কারণে ত্রাণ সহায়তা নিতে না পারা মধ্যবিত্তদের জন্যই এ উদ্যোগ নেয় ‘আশ্রয় বিদ্যাপিঠ’।

egg

‘ব্লাড ফর আশুগঞ্জ’ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক হাসান ইমরান বলেন, আমাদেরও আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে যতটুকু আমাদের সাধ্যে কুলিয়েছে ততটুকু দিয়ে করোনার এ দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এর ফলে রাস্তায় যাদের ইফতার করতে হয় তারা ইচ্ছে করলেও কোনো কিছু কিনে ইফতার করতে পারছেন না। তাদের বিষয়টি চিন্তা করে আমাদের সদস্যরা ইফতারের ব্যবস্থা করেছে। সর্বশেষ ঈদ উপলক্ষে উপকারভোগীদের পছন্দমতো ঈদ সামগ্রী নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছি আমরা।

‘বাউনবাইরার কতা’ সংগঠনের সভাপতি ডা. মাহবুবুর রহমান এমিল বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাদের চিন্তা ছিল আয়বঞ্চিত মানুষদের কী হবে সেটা নিয়ে। মূলত তাদের জন্যই আমরা আহার প্রজেক্ট হাতে নিই। একটি পরিবার যেন অন্তত ১০ দিন খাবারের কোনো কষ্ট না করেন এবং ঘর থেকে বের না হন সেজন্য আমরা খাদ্য সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। এটি সামাজিক দায়বোধ থেকেই করেছি আমরা।

এফএ/এমএস