২০০ কোটি টাকার লিচু নিয়ে গেল ‘আম্ফান’
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে পাবনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আম লিচু, বোরো ধান, শাকসবজিসহ ফসলের অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
পাশাপাশি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে গেছে। আম্ফানে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আম্ফানে পাবনায় কৃষিক্ষেত্রে হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা কৃষি বিভাগ বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকাল থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভগের উপপরিচালক আজাহার আলী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পাবনায় বুধবার বিকেল থেকেই বৃষ্টি এবং ঝড় শুরু হয়। সন্ধ্যার পর থেকে তা বেড়ে যায়। রাত ৮টার পর থেকে বাতাসের গতিবেগ এবং বৃষ্টি বাড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। জেলা শহরসহ সব উপজেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। সারারাত পুরো পাবনা অন্ধকারে ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জেলার গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে অসংখ্য ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। হাজার হাজার গাছ ভেঙে ও উপড়ে গেছে। শত শত বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। উঠতি বোরো ধান, আম লিচু এবং সব ধরনের শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভগের উপপরিচালক আজাহার আলী বলেন, আম্ফানের তাণ্ডবে আম লিচু ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে; যা অপূরণীয়। এ বছর ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে জেলায়। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। ঈশ্বরদীসহ সব স্থানে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছিল। কিন্ত আম্ফানে ২০ থেকে ২২ ভাগ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। জেলায় ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছিল। ৩০ ভাগ আম নষ্ট হয়েছে।
বেড়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শামসুর রহমান জানান, তার বাগানের কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার আম নষ্ট হয়েছে। এলাকার সব কৃষকের এবং বাড়ির আঙিনার কোনো গাছে আম নেই। এই ক্ষতি অপূরণীয়।
ঈশ্বরদীর লিচু চাষি কেতাব মন্ডল ওরফে লিচু কেতাব বলেন, ঈশ্বরদীতে এ বছর অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার লিচু হয়েছিল। কিন্তু আম্ফানের তাণ্ডবে পাকা লিচু সব বিনষ্ট হয়েছে। অসংখ্য লিচু গাছ ভেঙে গেছে। এতে ২০০ কোটি টাকার লিচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলায় আম্ফানে শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার ১১ হাজার ৬৭৪ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু আম্ফানে কমপক্ষে দেড় হাজার হেক্টরের ফসল ক্ষতি হয়েছে।
ঈশ্বরদীর জগন্নাথপুরের বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, এমনিতেই করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। তার ওপর আম্ফানের তাণ্ডব। এবার কৃষকের কোমড় ভেঙে গেল। ৭০ বিঘা জমির পেয়ারা, কলা, পেঁপেসহ সব ধরনের সবজি নষ্ট হয়েছে আমার। আমার মতো অনেক কৃষক আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির খবর নিতে দেরি হচ্ছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাপ করতে সময় লাগবে।
একে জামান/এএম/এমকেএইচ