ঝরে পড়া আমের ক্রেতা নেই, মাথায় হাত চাষিদের
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে সাতক্ষীরা জেলায় আম চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে গাছের আম ঝরে পড়েছে। অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। ঝরে পড়া এসব আমের কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে বিপর্যয়, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে মহাবিপর্যয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের সুজনশাহ গ্রামের মৃত প্রত্যুত কুমার দত্তের ছেলে বুদ্দদেব দত্ত। আম, লিটুসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করেই চলে তার সংসার। তবে ঘূর্ণিঝড়ে তার ২-৩ লাখ টাকার আম ঝরে পড়েছে। সেই সঙ্গে ঝরে পড়েছে লক্ষাধিক টাকার লিচুও।
কৃষক বুদ্ধদেব দত্ত বলেন, ‘বুধবার (২০ মে) রাতের ঝড়ে গাছের আম সব ঝরে গেছে। ২-৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়া আমের কোনো ক্রেতাও নেই। এসব আম কি করব বুঝতে পারছি না। আম বিক্রির টাকাতেই আমাদের বছরের সংসারের খরচ চলে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে লিচু গাছের জন্য এক ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা দাম বলেছিল কিন্তু বিক্রি করিনি। ভেবেছিলাম আরও বেশি দামে লিচু গাছটি বিক্রি করব। তবে ঝড়ে আম ও লিচু দুটোরই ক্ষতি হয়ে গেল। একটি ঘরও ধসে পড়েছে।’
এমন চিত্র জেলার সকল মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী ও চাষিদের। পাটকেলঘাটা থানা এলাকার আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমাদের ৫০-৬০টি আম গাছ রয়েছে। সকল গাছের আম ঝরে পড়ে গেছে। লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।’
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ি থেকে জানা গেছে, জেলায় আম চাষি রয়েছে ১৩ হাজার ১০০ জন। চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে ৪ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর এক হাজার ৫৫০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৫৬৪ হেক্টর, আম্রপালি ৮৯৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বাকি জমিতে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লতাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় দুই হাজার ২৭ হেক্টর জমির আমের ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ১৬ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন আমের ক্ষতি হয়েছে। আমগুলো সব ঝরে পড়েছে। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কয়েকদিন পরই আম বাজারজাতের উপযুক্ত হতো। সেই মুহূর্তে ঝড়টি আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের কপালে হাত তুলে দিল। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া জেলায় সবজি আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দুই হাজার ৭২ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে পটল, কলা পেঁপে, ঝিঙ্গেসহ নানা ধরনের সবজি।’
আকরামুল ইসলাম/এফআর/পিআর