করোনার পর দ্বিতীয় দফায় আমচাষিদের স্বপ্ন ভাঙল আম্ফান
একদিন আগেও বাগানগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছিলো আম। গোপালভোগ আম নামবে যে কোনো সময়।ভয়াবহ করোনার ঝুঁকি নিয়েই এবার মৌসুমি বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আমচাষি ও বাগান মালিকরা।
এর মাঝেই বৃহস্পতিবার ভোররাতে বয়ে গেল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তাতেই ঝরে পড়লো আমের রাজধানীর হাজারো চাষি ও বাগান মালিকের স্বপ্ন।
ঝড়ের পরে আমগাছের তলায় বিছিয়েছে আম।অধিকাংশ চাষি ঝরেপড়া আম কুড়াননি। এলাকার লোকজন যে যার মতো আম কুড়িয়েছেন। অনেকেই কুড়িয়ে পাওয়া আমি বিক্রি করছেন এক-দেড় টাকা কেজি দরে। তবে এ আমের ক্রেতা নেই।
৪০ বিঘা বাগানে আম রয়েছে রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হকের। তিনি বলেন, গাছে পরিপক্ব হয়ে উঠেছিল গোপালভোগ আম। আর কয়েকদিন পরই এ আম নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ঝড়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আম পড়ে গেছে।
তার ভাষ্য, ঝরে পড়া আমের দাম পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই প্যাকিং বস্তার দাম উঠে আসে না। তাই এবার তিনি ঝরেপড়া আম কুড়াননি। আম প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নায্যমূল্যে এ আম সংগ্রহ করলে চাষিদের লোকসান কিছুটা কমতো।
জেলা কৃষি দপ্তরগুলোর দেয়া তথ্য মতে, আম্ফানে সবচেয়ে বেশি আম ঝরেছে রাজশাহী জেলায়। এখানকার ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর বাগানে ২ লাখ ১০ হাজার ৯৪৭ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আম্ফানে প্রায় ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল হক।
প্রায় ১৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে নাটোর জেলার আম বাগান থেকে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নাটোরে ৪ হাজার ৮৬৪ হেক্টরে ৬৭ হাজার ২৮৪ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু ঝড়ে ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ শতাংশ এবং নওগাঁয় ৩ শতাংশ আম ঝরে গেছে আম্ফানে।
বিভাগে সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ জেলায় ৩০ হাজার ৩৫ হেক্টর আম বাগান থেকে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন আম।
অন্যদিকে, এবার সবেচেয়ে বেশি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নওগাঁয়। বরেন্দ্রখ্যাত এ জেলায় ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর আম বাগান থেকে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৫৩৯ টন।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, মুকুল আসার পর থেকে সংগ্রহ পর্যন্ত নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভেতর দিয়ে যায় আম। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান তেমনই একটি দুর্যোগ। অন্যান্যবার ঝড়ে আমি পড়লেও এবার একটু বেশি পরিমাণে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছিলো, এবার আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।এ ঝড়ের কারণে সেটা না হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে অনায়েসেই।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী, ২০ মে থেকে গোপালভোগ নামানোর কথা ছিল। এছাড়া রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা ২৫ মে, হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সব শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আম।
আঞ্চলিক কৃষি দফতরের হিসেবে, রাজশাহী অঞ্চলে এ বছর আম বাগান রয়েছে সবমিলিয়ে ৮০ হাজার ৩৬০ হেক্টর। এ থেকে উৎপাদন হতে পারে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭০ টন আম। গত বছর ৭২ হাজার ৯০৯ হেক্টর আম বাগান থেকে আম উৎপাদন ছিল ৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৮ টন।
কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, যথেষ্ট প্রস্তুতি সত্ত্বেও রফতানির ক্ষেত্রে রাজশাহীর আমকে পেছনে ফেলছিল সাতক্ষীরার আম। কিন্তু আম্ফানে সাতক্ষীরার প্রায় ৯৫ শতাংশ আম ঝরে পড়ায় রফতানিতে ভরসা এখন রাজশাহী আম।
জানা গেছে, গত বছর রাজশাহী জেলা থেকে ৩৬ দশমিক ৪৪৭ টন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ৬৪ দশমিক ৪৫ টন আম রফতানি হয়। এবার তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এমএএস/পিআর