ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে গাছের নিচে চাপা পড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
১৩৫ কিলোমিটার বেগে যশোরে তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বুধবার (২০ মে) সারাদিন থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হলেও রাতে প্রচণ্ড বেগে ঝড় বইছে। রাত ৮টার পর থেকে বাড়তে থাকে ঝড়ের গতিবেগ।
যশোরে সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হওয়ার খবর দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। গোটা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা, ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
চৌগাছার চানপুর গ্রামের পিন্টু মিয়া জানান, তার প্রতিবেশী মৃত ওয়াজেদ হোসেনের বাড়িতে ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৬) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩) গাছচাপা পড়ে মারা গেছে।
এ ব্যাপারে চৌগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত থান রাজীব জানান, তারা এমন খবর পেয়েছেন। কিন্তু ঝড়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এখনও যেতে পারেনি। ঘটনাস্থলে না গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যশোরের প্রাথমিক স্কুলগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মাধ্যমিক স্কুল ভবনও ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। ঝড়ের কবলে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হলে গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য এমন আগাম প্রস্তুতি রাখে জেলা প্রশাসন। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত কারোর সেখানে আশ্রয় নেয়ার খবর মেলেনি।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে সমানতালে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সন্ধ্যার পর থেকে বাড়তে থাকে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার মধ্যরাত ১২টার পর যশোরের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ঝড়ো হওয়া। রাত ৮টার পর থেকে ঝড়ের গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে, ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ গাছপালা ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শহরের খড়কি এলাকার বেশকিছু ঘরের টিন উড়ে গেছে। রাতে গোটা শহরের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে রয়েছে দোকানের সাইনবোর্ড, টিনসহ বিভিন্ন ছিন্নভিন্ন জিনিসপত্র। চৌগাছায় গাছচাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রচণ্ড ঝড় বইছে। ঝড় না থামলে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। এখনও কোনো মৃত্যুর খবর পাইনি আমি।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ের জন্য প্রাথমিক স্কুল খোলা রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রয়োজন পড়লে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ রয়েছে। ঝড়ে ক্ষতির শিকার কারও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার খবর মিলেছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখোন পর্যন্ত এরকম কিছু জানা যায়নি।
মিলন রহমান/এএম/আরএআর/পিআর/এমআরএম