জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছেন ওরা ১৫ জন
শরীয়তপুরের ছয়টি উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মী তারা। সংখ্যায় তারা ১৫ জন। জীবন বাজি রেখে ছুটে চলেছেন সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহে। খবর পেলেই পৌঁছে যান মানুষের বাড়িতে। স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের আপত্তি উপেক্ষা করে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনসেবার লক্ষ্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা।
শরীয়তপুরে কারও করোনার উপসর্গ দেখা দিলে অথবা কেউ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে এই ১৫ স্বাস্থ্যকর্মীর ডাক পড়ে। তারা হলেন- মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. আমির হোসেন, মো. নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, সুকমল চন্দ্র রায়, আব্দুস সালাম, মো. রতন মিয়া, মো. মিজানুর রহমান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব মো. হুমায়ুন কবির, জাকির হোসেন, কামাল উদ্দিন, অফিস সহায়ক মো. অসীম, সুমন শিকদার, মো. শাহজাহান শেখ, মো. উজ্জ্বল, টিপু সুলতান ও সিরাজুল হক।
শরীয়তপুর সদরের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. আমির হোসেন বলেন, করোনা রোগীর সংস্পর্শে গেলে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে প্রায় শতভাগ। ফলে প্রথম দিকে ভয় কাজ করত।
করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগীর নমুনা নিতে যেতে হবে শুনলেই পরিবারের লোকজন আপত্তি করত। তার উপর ছিল না কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষাসামগ্রী। একপর্যায়ে ভয়কে জয় করে আমরা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করি। গত ৩ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত ২৪৩টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। যার মধ্যে ১০ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।
তিনি বলেন, গত ১১ এপ্রিল সদর উপজেলার চিতলিয় ইউনিয়নের টুমচর এলাকায় চারজনের নমুনা সংগ্রহে যাই। পরে তাদের প্রত্যেকের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
আরেক স্বাস্থ্যকর্মী নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, প্রথমে যখন নমুনা সংগ্রহ করতে যেতাম তখন আমার মেয়ে বলতো বাবা চাকরিটা ছেড়ে দাও। মেয়েকে বোঝালাম কাউকে না কাউকেতো কঠিন কাজটি করতেই হবে। প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে সে আমার কথা বুঝতে পারে, তাই এখন আর আপত্তি করে না।
এ বিষয়ে মো. রতন মিয়া বলেন, ১৯৭১ সালে ছিল আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন করার যুদ্ধ। আর এখন চলছে দেশকে করোনামুক্ত করার যুদ্ধ। এ যুদ্ধের সৈনিক হওয়াও গর্বের। প্রথমে স্ত্রী-সন্তানরা আপত্তি করলেও এখন আর করে না। আমারও নমুনা সংগ্রহের কাজে যেতে একটা অনুভূতি কাজ করে। জীবন বাজি রেখে, ভয়কে জয় করে আমরা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করি।
অফিস সহায়ক মো. অসীম, সুমন শিকদার, মো. শাহজাহান শেখ, মো. উজ্জ্বল, টিপু সুলতান, সিরাজুল হকও এই কাজের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তারাও এ কাজে সহযোগিতা করছে।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আব্দুল্লাহ্ আল্ মুরাদ জানান, জেলার ছয়টি উপজেলাতেই নমুনা সংগ্রহ করার জন্য একটি করে দল রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী তারা। তাদের তিনি উৎসাহ দেন।
এফএ/পিআর